সম্ভাবনাময় সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং

হবিগঞ্জের বানিয়াচং বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত।এখানে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার।ঐতিহাসিক কমলারানীর দিঘি, লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন, ৬০০ বছরের প্রাচীন বিথঙ্গলের আখড়া, প্রাচীন মসজিদসহ অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে এ গ্রামে। তবে গ্রামের চারপাশ বেষ্টিত পরিখাকে চমৎকার ‘লেক’সহ পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনা সত্ত্বেও গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্রের কোনো সুযোগ-সুবিধা।
১৯৯৭ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলআর স্কুল মাঠের এক জনসভায় কমলারানীর দিঘিকে ঘিরে বানিয়াচংকে পর্যটনকেন্দ্র করার ঘোষণা দেন। সে ঘোষণা বাস্তবরূপ পায়নি। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, একটু যত্ন নিয়ে দর্শনীয় স্পটগুলোকে পর্যটন শিল্পের কাজে লাগালে পাল্টে যেত এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র। সরকারও পেত কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামোয় বিভক্ত এ গ্রামটি। গ্রামের নামে বানিয়াচং উপজেলার নামকরণ হয়েছে। সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। কিন্তু এ সংজ্ঞা অচল বানিয়াচং গ্রামের বেলায়। ১২০টি মহল্লা নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে সোয়া লাখ মানুষের বাস করে। ৩২ দশমিক ৪৩ বর্গমাইল আয়তনের বিশাল ভুখণ্ডটি মানুষের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
এক সময় বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো। তখন বানিয়াচং ছিল এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম। শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ায় আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের বড় গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বানিয়াচং। ড. শেখ ফজলে এলাহীর ‘বানিয়াচং বৃত্তান্ত’ বইতেও এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। সুলতানি আমলে করদ রাজ্য ও মোগল আমলে লাউর রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং।
দ্বাদশ শতাব্দীতে কমলারানীর দিঘি খনন করেন রাজা পদ্মনাভ। ৬৬ একর আয়তনের কমলারানীর দিঘি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিঘি হিসেবে স্বীকৃত। তৎকালীন মন্ত্রী সিরাজুল হুসেন খানের প্রচেষ্টায় ১৯৯০ সালে দিঘিকে পুনঃখনন করা হয়। সাগরের মতো বিশাল হওয়ায় সাগরদিঘিও বলে থাকেন লোকজন। মোগল আমলের প্রাচীন বিবির দরগা মসজিদ, পুরান বাগ, ২ নং হাবেলি ও কালিকাপাড়ার মসজিদ, জয়কালি মন্দির, রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী হয়ে আছে এখানে।
বানিয়াচংয়ের চারপাশ ঘেরা প্রায় ২০ কিলোমিটার পরিখা। এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া পরিখা স্থানীয়রা চেনে গড়খাল নামে। পরিখাটি বর্ষাকালে হ্রদের রূপ ধারণ করে। সুপরিকল্পনা ও কার্যকরি উদ্যোগ নিলে ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে বানিয়াচংয়ের পরিখাকে ঘিরে ‘লেক’ গড়ে তোলা সম্ভব। পরিখাকে পুনঃখনন করে দুই পাড় পাকাবাঁধাই, দৃষ্টিনন্দন পুল ও ঘাট নির্মাণসহ শোভাবর্ধন ভৌত কাজ প্রকল্প গ্রহণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবনে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা যেতে পারে বলে পরিবেশবিদরা অভিমত দিয়েছেন। দৃষ্টিনন্দন সাগরদিঘি, প্রাচীন পুরাকীর্তির বাড়তি আকর্ষণের সঙ্গে পরিখা লেক যুক্ত হলে চকচক ঝলমলে গ্রামে রূপ নেবে বানিয়াচং।

কাজল সরকার

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০