গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘২০৫০ সালের বিশ্ব অর্থনীতি: দ্রুত প্রবৃদ্ধির শীর্ষ তিনে থাকবে বাংলাদেশ’ শীর্ষক খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রতিবেদনটির ভিত্তি মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস (পিডব্লিউসি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য লং ভিউ: হাউ উইল দ্য গ্লোবাল ইকোনমিক অর্ডার চেঞ্জ বাই ২০৫০’ শিরোনামের গবেষণা। গবেষণাটি মূলত আগামী ৩৪ বছরে বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, সেটি নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে থাকতে পারে বাংলাদেশ; বাকি দেশদ্বয় হচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনাম। একে আমরা নিছক আশাবাদ হিসেবে নিতে চাই না। বরং তা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। অনেকেরই জানা, একটি অর্থনীতি কতটা বড় ও শক্তিশালী, সেটি নির্ধারণের সর্বস্বীকৃত উপায় আছে দুটিÑএক. ক্রয়ক্ষমতার সমতা তথা পিপিপির ভিত্তিতে জিডিপির আকার এবং দুই. বাজার বিনিময় হার তথা এমইআরের ভিত্তিতে জিডিপির আকার। এখন পিডব্লিউসি’র গবেষণাটি বলছে, পিপিপির ভিত্তিতে আগামী ৩৪ বছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার বাড়বে প্রায় ৫ গুণ। এদিকে এমইআরের ভিত্তিতে একই সময়ে আমাদের অর্থনীতির আকার বর্তমান সময়ের অন্তত ১০ গুণ বড় হওয়ার কথা। সে হিসেবে ২০১৬ সালে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেখানে ৩১তম অবস্থানে রয়েছে, সেখানে ২০৫০ সালে এর অবস্থান হবে ২৫তম। হিসাবটি যদিও আশাবাদী প্রাক্কলন, এ দেশের জনগণ নিঃসন্দেহে চাইবে প্রত্যাশিত সম্ভাবনাটি বাস্তবে রূপ পাক।
প্রসঙ্গত আলোচ্য ইস্যুতে আমাদের প্রতিনিধির কাছে মন্তব্য জানিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুর। তার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হবে শিল্প খাত। এ মতের বিরোধিতা করা কঠিন। এদিকে স্থানীয় বেসরকারি থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বোধকরি সম্ভাবনার চেয়ে চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতিই বেশি নজর দিয়ে সতর্কভাবে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা জোর দিতে চাই, চলমান প্রেক্ষাপট, ভবিষ্যৎ সমস্যা ও সম্ভাবনা কোনোটিই যেন দৃষ্টি না এড়ায় নীতিনির্ধারকদের। শিল্প খাতের উপযুক্ত বিকাশ ছাড়া কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন, এটা পুরোনো কথা। এক্ষেত্রে নতুন সংযোজন হলো, বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক হারে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চাইলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়বে। এদিকে বাংলাদেশ নিজেই দূষণসৃষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকিতে পড়েছে। এখন কীভাবে ওই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ও পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে কাম্য সমন্বয় আনা যায়, তা এক ধাঁধা। শেয়ার বিজ প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, আগামী ৩৪ বছরে প্রতি বছর দশমিক ৬০ শতাংশ করে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী যোগ হবে অর্থনীতিতে। খেয়াল করা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষায় টানা অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। অনুমান করা যেতে পারে, আগামী ৩৪ বছরে ক্রমাগতভাবে বাড়বে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃজনের চাহিদা এবং সেই কর্ম হওয়া চাই ব্যক্তিবর্গের উপযুক্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, কেবল সরকারি খাত দিয়ে ওই পরিমাণ ও মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান জোগানো সম্ভব নয়। সেজন্য বেসরকারি খাতকেই পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। জনগণ আস্থা রাখতে চাইবে, বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের মাথায় আছে। প্রচেষ্টার অভাবে সম্ভাবনাগুলো বিনষ্ট হোক, এটা নিশ্চয়ই কারও কাম্য নয়।
Add Comment