সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: সম্ভাবনা সত্ত্বেও নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন তুলনামূলক কম। মাত্রাতিরিক্ত সড়কপথ নির্ভরতায় বেড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যয় ও ভোগান্তি। তবে ফেনী ও কুমিল্লায় চলমান স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পরিবহনে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে নৌপথে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। এ বন্দর দিয়ে আনা কনটেইনারবাহী শিল্প ও ভোগ্যপণ্যের পুরো ৯৪ শতাংশ সড়কপথে, ৩ শতাংশ নদীপথে এবং ৩ শতাংশ রেলপথে পরিবাহিত হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনের বন্যা এবং এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়। উদ্ভূত কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার প্রভাবে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে। এখন কর্তৃপক্ষ বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখার জন্য নানা রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে আমদানি ও রপ্তানিকারকরা চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বা রেলপথে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হচ্ছেন।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও জেটিতে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ (২০ ফুট দীর্ঘ) ধারণক্ষমতার বিপরীতে কনটেইনার ছিল ৩৭ হাজার ৯৯৬ টিইইউ। ওই সময় পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ১ হাজার ৬৪৭ টিইইউ। আগের দিন শনিবার ডেলিভারি হয়েছিল ১ হাজার ৯২৯ টিইইউ। এছাড়া বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড, টার্মিনাল এবং বহির্নোঙরে ও জলসীমানায় পণ্যবাহী ১০৮টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে এবং ৩৫টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, সম্ভাবনা থাকার পরও নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন তেমন হয় না। সড়কপথ নির্ভরতায় পণ্য পরিবহন ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে। এর পরিবর্তে নদীপথ ব্যবহার করা হলে পরিবহন খরচ কমত। সড়কের ওপর চাপও কমত। চলমান ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পরিবহনে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে নৌপথে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ পথে সরকারি পৃষ্ঠাপোষকতা দিলে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, ফেনী, কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পরিবহনে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। উদ্ভূত কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে নৌপথে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌপথ ব্যবহার করে দেশের আমদানি-রপ্তানি বেগবান করতে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা যাচ্ছে।
আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার পরিবহনে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারে। বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির পর্যাপ্ত ইনল্যান্ড জাহাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের লজিস্টিকস সুবিধাদি এ কার্যক্রমের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সব আমদানি-রপ্তানিকারকের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পানগাঁও আইসিটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সংগ্রহ বা জাহাজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।