ইসমাইল আলী: পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল সেতু। ২০০৯ সালে গৃহীত এ প্রকল্প আড়াই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সেতু তিনটি নির্মাণে সময় লাগে ১০ বছর। তবে সেতু তিনটি নির্মাণে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এতে সেতুগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে।
এরই মধ্যে দুই পাশেই চর পড়ে নদী সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আবার অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচল করলেও তা নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে সেতু তিনটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠেছে।
সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আইএমইডি। এতে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের ৪৯তম কিলোমিটারে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ কামাল সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৮৯১ দশমিক ৭৬ মিটার। সড়কটির ৬১তম কিলোমিটারে নির্মিত শেখ জামাল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৮২ দশমিক ৩৮ মিটার। আর ৬৬তম কিলোমিটারে নির্মিত শেখ রাসেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪০৮ দশমিক ৩৬ মিটার।
আড়াই বছরে সেতু তিনটি নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল। তবে পাঁচ দফা সময় বৃদ্ধির পর ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। আর সেতু তিনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে তিন দফা বৃদ্ধির পর তা দাঁড়ায় ১৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকল্পটির বেশকিছু দুর্বলতা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রকল্পটির জন্য কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এতে সেতুগুলোর অনেক অংশে দুই পাশেই চর পড়ে নদী সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে নৌ-চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে সেতুর নিচে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও নদীভাঙন সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত সেতুর নিচে ও আশপাশের এলাকায় ড্রেজিংয়ের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির অপর ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেতুগুলোয় যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর যে হারে ট্রাফিক বৃদ্ধি হয়েছে, সেটা বিবেচনা করলে ও অন্যান্য প্রকল্প সমাপ্ত হলে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে সেতুগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া সেতুগুলোয় অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হলে সেতুগুলোয় অতিরিক্ত ভারবাহী যান চলাচল আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে সেতুগুলো ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
এদিকে সেতুগুলোয় নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে শেখ কামাল সেতুর এক্সপানশন জয়েন্টগুলো অপরিষ্কার ও পানি চুইয়ে শ্যাওলা জমে গেছে। সেতু ও সংযোগ সড়কে মাত্র চারটি সোলার বাতি ঠিক আছে। বাকিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আর নদীর নীলগঞ্জ প্রান্তে সেতুর দুই পাশেই প্রায় অর্ধেক নদীতে চর পড়ে গেছে। ফলে প্রশস্ততা কমে গিয়ে নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এছাড়া সেতুর নিচে উভয় পাশেই বালুর ব্যবসা ও অবৈধ স্থাপনা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
শেখ জামাল সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল আরামদায়ক নয়। বিশেষ করে মূল স্প্যানের উভয় পাশে হঠাৎ লেভেল ডাউন হয়ে গেছে। ফলে দ্রুত চলমান যানবাহনে ঝাঁকুনি ও দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সেতুতে রাতে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। সব সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে ও ব্যাটারি অকেজো হয়ে পড়েছে। আর হাজীপুর প্রান্তে সেতুর দুই পাশে চর পরে নদী সংকুচিত হয়ে গেছে। এ সেতুর নিচেও বালুর ব্যবসা ও অবৈধ স্থাপনা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
এদিকে শেখ রাসেল সেতুতেও নির্মাণ-পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। এর মধ্যে সেতুটির এক্সপানশন জয়েন্টগুলো অপরিষ্কার এবং পানি চুইয়ে শ্যাওলা জমে গেছে। এ সেতুতেও রাতে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। সব সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে ও ব্যাটারি অকেজো হয়ে পড়েছে। আর সেতুর দুই পাশেই অল্প চর পড়ে নদী সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর এ সেতুর নিচেও বালুর ব্যবসা ও অবৈধ স্থাপনা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সব মিলিয়ে ২২৩টি সোলার লাইট লাগানো হয়েছিল সেতু ও সংযোগ সড়কে। এগুলোর পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। কিন্তু মাত্র চারটি লাইট ঠিক আছে। বাকিগুলো পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর বাইরে শেখ কামাল ও শেখ রাসেল সেতুতে একটি করে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আন্ডারপাস দুটোতেই ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা দুর্বল। এতে ড্রেনগুলো জ্যাম হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর শেয়ার বিজকে বলেন, সেতুগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ও নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে আইএমইডি বেশকিছু সুপারিশ করেছে। সে অনুযায়ী দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।