সম্মতিপত্র সই: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে দুই মাসের মধ্যে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সম্মতিপত্র সই হয়েছে।

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির পক্ষে তার দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে এ সম্মতিপত্রে (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সই করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এ ‘প্রথম পদক্ষেপ’, দুই দেশকে এখন ‘পরের স্টেপে’ যেতে হবে। ‘এখন কাজটা শুরু করতে হবে। সব ডিটেইলের (অ্যারেঞ্জমেন্ট) মধ্যে আছে। আমরা ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত জানাব।’

পরে গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি সইয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।

এ বিষয়ে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক দফতরের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট চিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশে ফরম (রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিবন্ধন ফরম) পূরণ করে আমাদের ফেরত পাঠালেই যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে আনতে চাই। এদিকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ওই সম্মতিপত্র তৈরি করা হয়েছে ১৯৯২ সালে দুই দেশের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে, যেখানে শনাক্তকরণ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাধারণ নীতিমালা ঠিক করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, রাখাইনে কয়েক শ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে দেশটির নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয় এ জনগোষ্ঠীকে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ বলে দাবি করেন। স্টেট কাউন্সিলরের দফতরের গতকালের বিবৃতিতেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি।

এর আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কিছুদিন কূটনৈতিক আলোচনার পর ১৯৯২ সালে একটি যৌথ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ওই চুক্তির আওতায় মিয়ানমার সে সময় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। চুক্তি নির্ধারিত যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও দুই হাজার ৪১৫ জন শরণার্থীকে সে সময় মিয়ানমার থেকে আসা বলে চিহ্নিত করা হলেও মিয়ানমার তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি।

সম্প্রতি গত আগস্ট থেকে নতুন করে নির্যাতনের মুখে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে সু চির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করা হয়, যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিও থাকবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সুতরাং ওই চুক্তি অনুসারে এবার রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে দেড় মাস। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি বিবৃতিও দেয়। তবে নতুন চুক্তির বিষয়ে মিয়ানমার অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছিল।

এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট-আসেমের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে এ সপ্তাহের শুরুতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। সোমবার আসেম সম্মেলনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। এশিয়া ও ইউরোপের ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন। সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টায় বুধবার সকালে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থু তিন ঘণ্টা আলোচনা করেন। সেখানে একটি খসড়া তৈরি করা হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বসেন কিয়া তিন্ত সোয়ের সঙ্গে। তাদের আলোচনাতেই সম্মতিপত্রের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয় বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০