বেলাল হোসাইন বিদ্যা: শুধু বাংলাদেশিরাই নন, সম্ভবত বিশ্বের সব দেশের মানুষের কাছে ভারতের ‘তাজমহল’ একটি সুপরিচিত দর্শনীয় স্থান। কেনই বা হবে না; এর সৌন্দর্য, নিপুণ কারুকাজ সবাইকে মুগ্ধ করে। এর কাছেই রয়েছে সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি। কিন্তু আমরা কজন এ সম্পর্কে অবগত আছি?
ভারতীয়দের কাছে হুমায়ুনের সমাধি পরিচিত হলেও এর ইতিহাস ও তাজমহলের সঙ্গে এর যোগসূত্র অনেকেরই অজানা! তাজমহল ও হুমায়ুন টম্ব (কবর) দুই-ই মোগল আমলের নিদর্শন। তাজমহলের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ স্মরণে এ সমাধি নির্মাণ করেন। আর সম্রাট হুমায়ুনের স্ত্রী হামিদা বানু বেগম নির্মাণ করেন হুমায়ুনের সমাধি। তিনি ‘বেগা বেগম’ নামেই পরিচিত ছিলেন। হুমায়ুন ছিলেন মোগল বংশের দ্বিতীয় অধিপতি ও সম্রাট শাহজাহানের পিতামহ সম্রাট আকবরের পিতা। ১৫৫৬ সালে হুমায়ুনের মৃত্যুর পর তাকে দিল্লি ফোর্টের পুরোনো কেল্লায় সমাহিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে হিমু নামের একজন শাসক কর্তৃক ফোর্টটি দখল হয়ে যায়। এরপর হুমায়ুনের কবর স্থানান্তর করা হয়। সম্রাট হুমায়ুনের প্রথম স্ত্রী বেগা বেগম দিল্লিতে এ সমাধিসৌধ স্থাপন করেন।
উদ্যানসমৃদ্ধ প্রথম কোনো সমাধি ভারতে এটাই প্রথম। এর কারুকাজ পরবর্তী সময়ে ভারতের আরও নানা স্থাপনায় প্রভাব বিস্তার করেছে; যার মধ্যে অন্যতম তাজমহল। এই সমাধিসৌধটির নকশা করেন পার্সিয়ান স্থপতি মিরাক মির্জা গিয়াস। উদ্যানটি নতুনভাবে সাজানোর জন্য লর্ড কার্জন আদেশ দেন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত সৌধটি অবহেলায় পড়ে ছিল। কোথাও কোথাও ফাটল দেখা দিয়েছিল, খসে পড়েছিল কোনো গাঁথুনি, বাগানটিও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্বঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। ১৯৯৭ সালে আগা খান ট্রাস্টের অধীনে সমাধিটিকে পুনঃসংস্কার করা হয়। সংস্কার কাজ শেষ হয় ২০০৪ সালে। তবে ২০০৭ সালে
‘সিক্স-লেন-লিংক’-এর একটি প্রকল্পের ফলে সমাধিটি হুমকিতে পড়ে। পরে প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। হুমায়ুন সমাধি পুনরায় তার নিজস্ব সৌন্দর্য ফিরে পায়।
Add Comment