প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে অনিয়ম দেখতে পেয়েছেন, তা দেশের এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলাহীনতার খণ্ডচিত্র মাত্র। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে অবস্থা যে এর চেয়েও খারাপ, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুত সময়ানুবর্তিতার চর্চা করতে হয় শিশুকাল থেকেই। আর শিক্ষকদের দেখেই দৈনন্দিন জীবনে অনেক অভ্যাস রপ্ত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ওইদিনের ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, খুব সম্ভবত প্রায়ই দেরি করে আসেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীরা যে কিছুটা হলেও প্রভাবিত হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। প্রশ্ন জাগে, যে শিক্ষকরা নিজেরাই দেরি করে স্কুলে আসেন, তারা শিক্ষার্থীদের সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেবেন কীভাবে? এ থেকে প্রশ্ন ওঠে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে।
দেরিতে আসা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আমরা জানি না। তবে মনে করি, এর কারণ দর্শানোর পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, এসব দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট থানার শিক্ষা কর্মকর্তার। তিনি যথাযথভাবে দেখভাল করলে কোনো বিদ্যালয়ে এ ধরনের অনিয়ম হওয়ার কথা নয়। ওই শিক্ষা কর্মকর্তা তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন কি না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের ধারণা, শিক্ষা কর্মকর্তাদের দিয়ে বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শন নিয়মিত রাখা গেলে শিক্ষকদের যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে, অন্যান্য অনিয়মও তাতে কমে আসবে। নিজ এলাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর এমন অভিজ্ঞতার পর এ ধরনের কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলেই আশা।
সন্দেহ নেই, প্রাথমিক বিদ্যালয়েই রচিত হয় একজন শিক্ষার্থীর ভিত্তি। শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান না করলে তাদের পড়ালেখার গুণগত মান ভালো হয় না। এর প্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট শ্রেণির ফলে নয়, পড়ে তার পরবর্তী জীবনে। ভিত্তি ভালো না হওয়ায় শিক্ষার্থী পরবর্তী পর্যায়ে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ যেমন পায় না, তাকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চাকরির বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রেও। এসব বিষয় অবশ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদেরও জানা। আমরা চাইবো, তারা বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন এবং যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পাঠদানে মনোযোগী হবেন। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে ব্যাপারে দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও থাকা চাই সতর্ক।
শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, এমন অনিয়ম চোখে পড়ে প্রায় সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এর অন্যতম কারণ, শিক্ষকরা এ সময়ে ব্যস্ত থাকেন অন্য কাজে; সিংহভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তা আয় বৃদ্ধির জন্য। জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য আয় বৃদ্ধির প্রয়োজন কখনও কখনও হতে পারে। কিন্তু এ কারণে কর্তব্যে অবহেলা নিয়মিতভাবে করা কি সমীচীন? জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে সমাজে মানুষ যাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখে, এর উত্তর তাদের ভালো জানা। এজন্য তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় কর্তব্যসচেতনতাও প্রত্যাশা করি। বলা বাহুল্য, এদেশের মানুষের ‘সময়জ্ঞান’ সম্পর্কিত অনেক কৌতুক শোনা যায় মুখে মুখে। এ নিয়ে অনেক সময় হাসাহাসিও হয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। শিশুরাই আগামী দিনের নাগরিক। এ লজ্জা থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তাদের করে তুলতে হবে সময়সচেতন। এজন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব এক্ষেত্রে আরও বেশি। শিশু যদি তার বিদ্যালয়ে সময়ানুবর্তিতার চর্চা না দেখে, তাহলে এটা শেখা তার পক্ষে খুব কঠিন। আমরা চাই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময়ানুবর্তিতার চর্চা হোক; পাঠদান কার্যক্রমও চলুক যথাযথভাবে।
Add Comment