Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:46 pm

সময় এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার জবাবদিহিতার

বাজার ওঠানামা করবে এটাই তার ধর্ম। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজার ভিন্ন আচরণ করছে। বাজারের এ আচরণ বন্ধ করতে হবে। ১০ বছর ধরে এ আচরণ করে বাজার টিকে আছে এটাই আশ্চর্যের বিষয়। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। এখন যদি প্রধানমন্ত্রী সব দায়দায়িত্ব ছেড়ে বাজার নিয়ে বসেন, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাখা হয়েছে কেন? সময় এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জবাবদিহি করার। তারা যদি না পারে, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহি করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক প্রেসিডেন্ট সুলতান মাহমুদ এবং ৭১ টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম।
সুলতান মাহমুদ বলেন, দেশের অর্থনীতির সঙ্গে বাজারের কোনো মিল নেই। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে বিনিয়োগসীমা অর্থাৎ এক্সপোজার লিমিট বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও বাজারে পতন থামানো যাচ্ছে না। যাদের এ বিষয়ে মনোযোগী বা সতর্ক হওয়ার কথা, তারা কেন জানি উদাসীন! বাজারে আইপিও আসা দোষের কিছু নয়। কয়েক বছরে যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে, ওইসব কোম্পানির এক বা দুবছর পর ইপিএসের অবস্থা, লভ্যাংশ কী পরিমাণ দিয়েছে প্রভৃতি বিবেচনা করলে বোঝা যায়, কোনোমতেই এসব কোম্পানি বাজারে আসার যোগ্য নয় বা বাজারে আসার কোনো ভিত্তি ছিল না। এ ধরনের বহু কোম্পানি বাজারে এসেছে। এসব কোম্পানি কেন তালিকাভুক্ত করা হলো সেটাই ভাবার বিষয়। বাজারে তারল্য সংকট এবং বিভিন্ন ধরনের গুজব বা কারসাজি রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে। আসলে এ বিষয়গুলো যদি বাদ দিয়ে বলি, তাহলে এ রকম দাঁড়ায়: বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে। অর্থাৎ যাদের বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা যদি জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকার ভান করে, সেক্ষেত্রে করার কিছুই থাকবে না। বাজারে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। যাকে যে জায়গায় বসানোর কথা নয়, তাকে সেখানে বসানো হয়েছে। এর নেপথ্যে কারা রয়েছে? এটি কিন্তু সরকারের একেবারেই নজরে নেই। অর্থাৎ বিএসইসির অভ্যন্তরে কী হচ্ছে। বিএসইসিকে কারা নিয়ন্ত্রণ করছে বা পরিচালনা করছে। বিএসইসি নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে না; তাকে অন্য কেউ পরিচালিত করছে।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, একদিকে বাজারে ইকুইটির পরিমাণ কম, অন্যদিকে চাহিদাও কম। কম ইকুইটি দিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। ফলে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি করতে সুবিধা হয়। বাজার ভালো করতে হলে প্রায় এক হাজারের বেশি ইকুইটি আনতে হবে। তবে এটি সরকার বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে ইচ্ছা করলেই পারে। ৯ বছরে প্রায় ১০০’র বেশি কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওইসব কোম্পানির বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানি ভূরিভূরি আনলেও বাজার ভালো হবে না। যেসব কোম্পানি আনলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো না আনাই ভালো। আর যেসব কোম্পানির চাহিদা রয়েছে এবং বাজার উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে সে ধরনের কোম্পানি আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাজার ওঠানামা করবে এটাই তার ধর্ম। এটি বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার ভিন্ন আচরণ করে। বাজারের এ আচরণ বন্ধ করতে হবে। ১০ বছর ধরে এ আচরণ করে বাজার টিকে আছে এটি আশ্চর্যের বিষয়। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে। এখন যদি প্রধানমন্ত্রী সব দায়দায়িত্ব ছেড়ে বাজার নিয়ে বসেন, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাখা হয়েছে কেন? এখন সময় এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করার। তারা যদি সেটি না পারে, তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহি করতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ