পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। তবে এখানে হিসাব করে কেনাবেচা না করলে লোকসানে পড়তে হয়। শেয়ার কেনার সময়ে খুবই সতর্ক হতে হবে। এখানে কিনে লাভ করতে না পারলে, বেচে লাভ করা কঠিন। তাই কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেবুঝে শেয়ার কিনতে হবে। একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার যখন অতিমূল্যায়িত থাকে তখন সেটি কিনলে লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কাই বেশি। গতকাল এনটিভির ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
এনটিভির সিনিয়র কনোসপনডেন্ট হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইননাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইননিভাসিটির অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা ও শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এমডি সাজেদুল ইসলাম।
ড. মুসা বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আচরণ বোঝা খুবই কষ্টকর। পৃথিবীর সব জায়গায় পুঁজিবাজার সম্পর্কে মন্তব্য করা কঠিন। তবে অন্যান্য বাজারে যে নিয়মানুবর্তিতা থাকে, তা আমাদের বাজারে নেই। যে কারণে সমস্যাটা বেশি হয়ে যায়। আমরা দেখেছি, বছরের প্রথম দিকে সূচকের একটি বড় রকমের উত্থান। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সূচক ছিল ৫০০৭ পয়েন্টে এবং তা ২৪ দিনের মধ্যে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭০০ পয়েন্টে। বড় ধরনের সূচক বাড়াতে অনেকেই ভেবেছিল পুঁজিবাজার হয়তো আরও অনেক এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাজার যখন বাড়ে, তখন অনেকেরই প্রফিট হয় এবং তা নিতে চায়। আর প্রফিট গ্রহণকালে বাজারে একটি নি¤œমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। আমাদের দেশের বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা যেহেতু বেশি সে কারণে যখনই বাজার একটু কমতে থাকে তখনই সবার মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ফলে সূচক আরও নেমে যায়। কিছুদিনের ব্যবধানে সূচক ৫৭০০ থেকে কমে বর্তমানে ৫৫০০-এর মতো হয়েছে। তবে আমি মনে করি এ সংশোধন পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। তাছাড়া পুঁজিবাজার সংশোধন হবে এটি বাজারের স্বাভাবিক আচরণ। লক্ষ করলে দেখবেন, আমাদের পুঁজিবাজারে বর্তমানে বেশ বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। আগে মোটামুটিভাবে সব কোম্পানির আর্থিক বছর শেষ হতো ৩১ ডিসেম্বর। এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বছর শেষ হয় ৩০ জুন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্রথম প্রান্তিকের খবর আসছে। লভ্যাংশ ঘোষণার আগে কিন্তু ব্যাংকের শেয়ারের দর অনেক বেড়েছিল। এখন আমার ধারণা, আর্থিক খাত ছাড়া অন্য খাতের ক্লোজিং ৩০ জুন। কাজেই এসব কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার আগে মে-জুন মাসে সূচক কিছুটা বাড়াবে।
সাজিদুল ইসলাম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তি বিনেয়োগকারী যারাই আছেন তাদের সবারই উদ্দেশ্য প্রফিট করা। আমরা বলি যে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা আছেন তারা প্রফিট পাচ্ছেন না। এ কথাটা কিন্তু সবক্ষেত্রে ঠিক নয়। তারাও মুনাফা করছে। এছাড়া আমরা যদি বিনিয়োগ কখন করবো তা বুঝতে না পারি, তাহলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। কাজেই কেনার জায়গায় যদি ভুল হয় অবশ্যই বিক্রির জায়গাতেও ভুল হবে। তবে বাজারে যখন বায়ার থাকে না তখন বড় বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে শেয়ারগুলোকে কিনে জমা করতে থাকে। আর আমরা অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় যখন তাদের সঙ্গে যোগ দিই তখন তাদের বিক্রির সময় চলে আসে। তখনই বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে গুজব ছড়াতে থাকে শেয়ারের দাম আরও বাড়বে। আর এ গুজবের ওপর ভিত্তি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সে শেয়ারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সুযোগে বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দেয়। এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
শ্রুতিলিখন, রাহাতুল ইসলাম
Add Comment