সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম পড়ে প্রায় ১ হাজার ১৯৩ ডলার; যা বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ২৬ হাজার ৭৫৬ টাকা। অর্থাৎ প্রতি লিটারের দাম ১২৬ টাকা ৭৫ পয়সা। আর গত অক্টোবর থেকে মার্চ শেষে সয়াবিনে টনে কমেছে ৪৬২ মার্কিন ডলারের বেশি। অর্থাৎ প্রতি লিটারের বাংলাদেশি টাকায় কমেছে ৪৯ টাকারও বেশি। অথচ বাংলাদেশের বাজারের সয়াবিন খোলা লিটার ১৭৩ টাকা এবং বোতলজাত ১৯৯ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। নানান অজুহাতে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত দাম নিয়ে মুনাফা করে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গতকাল চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার ছিল বাড়তির দিকে। এ বাজারে বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় দর ওঠানামা করে। গতকাল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাম অয়েল মণপ্রতি দর ছিল ৪ হাজার ৯৫০ থেকে ৫ হাজার; যা এক মাস আগেও ৪৬৫০ টাকা। আর তিন মাস আগে মণপ্রতি ৪৩০০ টাকা ছিল। একই অবস্থা সয়াবিন তেলের বাজারেও। গতকাল খোলাবাজারের সয়াবিনের মণপ্রতি দাম ছিল ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৬৬০০ টাকা; যা এক মাস আগে ৬২০০ টাকা পর্যন্ত ছিল।
খাতুনগঞ্জ এলাকার ভোজ্যতেলের পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাহেদুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ভ্যাট আরোপ করায় বাজারে এখন সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়তির দিকে। আর চাহিদাও তেমন নেই। সবার জন্য এলসি খোলা স্বাভাবিক হলে কমে আসবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। যার প্রভাব কিন্তু আমাদের এ বাজারের কিছুটা পড়েছে। যদিও সরকারি নির্ধারিত বোলতজাত পণ্যের দামে পড়েনি। এতে সাধারণ মানুষ তেমন সুবিধা পাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ১০ মাসে নৌপথে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ২০৭ টন ক্রুড সয়াবিন এবং ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯২ টন পাম তেল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১৩৮ টন ক্রুড সয়াবিন ও ৮ লাখ ৭ হাজার ৬৭১ টন পাম তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে সয়াবিন ও পাম অয়েল মিলে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন তেল আমদানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে ক্রুড সয়াবিন ও পাম তেল এক লাখ ৭১ হাজার ৬২২ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে ২০২২ সালে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধিত সয়াবিন তেলের দর উঠেছিল টনপ্রতি দুই হাজার ডলার। গতকাল এ দর নেমে আসে টনপ্রতি ১ হাজার ১৯২ ডলার ৪৮ সেন্ট। অর্থাৎ দেশের ডলার রেট বিবেচনায় লিটারপ্রতি ১২৬ টাকা ৭৫ পয়সা। আর গত অক্টোবর থেকে মার্চ শেষে সয়াবিনে টনে কমেছে ৪৬২ মার্কিন ডলারের বেশি। অপরদিকে মালয়েশিয়ার কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বুশরা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভসে গতকাল প্রতি টন ১০০৫ ডলার; যা এক বছর আগে ছিল এক হাজার ৬৮২ ডলার।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, একদিকে আমদানি বেশি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিন্মমুখী। এরপরও দেশের বাজারে অস্থিরতা হওয়ায় পেছনে আমদানিকারক-মিলমালিকদের সিন্ডিকেট দায়ী। নানা অজুহাতে তারা সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর যথাযথ তদারকি করা উচিত।
খাতুনগঞ্জ এলাকার পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাব্বির ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ সাব্বির আহমেদ বলেন, ভোজ্যতেলের ওঠানামায় আমিও লোকসান করছি। আমার পামতেল মণপ্রতি কেনা ছিল ৪৮৫০ টাকা। আর দাম পড়ে যাওয়ায় বিক্রয় করতে হয়েছে ৪৪৬০। এভাবে হলে তো আমাদের ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। ফলে চিনি, গম ও তেল ট্রেডিং ছেড়ে দিয়ে আেেগর মতো মসলা জাতীয় পণ্য কেনাবেচা নিয়ে আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় একটি ভোজ্যতেল আমদানিকারক গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বলেন, বন্দর দিয়ে এখন যেসব তেল আমদানি হচ্ছে, তার ঋণপত্র বিশ্ববাজারে ১৫০০ ডলারের আমদানি করা। আর দেশে প্রতি ডলারের বিনিময় হার তো ২০ টাকা করে বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম প্রতি টন ১৪০০ ডলারের ঘরে বুকিং হচ্ছে। আর ডলার রেট কমলে দাম কমবে। তখন হয়ত দাম সমন্বয় করে সেল করা হবে। কারণ রেট তো বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব নয়। এখন বাজারের সবার স্টক ভালো আছে।
উল্লেখ, দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর বিপরীতে সারা বছরে আমদানি হয় ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টন। মধ্যে পাম অয়েল ১৮ টন এবং সয়াবিন ১২ লাখ টন। এসব চাহিদার সিংহভাগ তেল সরবরাহ করে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল, এস আলম গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপ