নিজস্ব প্রতিবেদক : মোটা চাল, দেশি পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ডিমের দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। পাইকারিতে কমলেও খুচরায় আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। বাজারে নতুন সবজি হিসেবে শিম ও ফুলকপি এলেও দাম চড়া। বেড়েছে সয়াবিন তেল, খোলা আটা ও ময়দার দাম। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও এলাকার মুদি দাকান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় (ওএমএস) সারাদেশে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে মোটা চালের বাজারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে কমেছে ছয় টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল (স্বর্ণা, চায়না ও ইরি) এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে। একইভাবে মাঝারি ধরনের অর্থাৎ লতা ও পাইজাম চালের দাম কমেছে কেজিতে ৪ টাকা।
তবে গত সপ্তাহে যে মিনিকেট ও নাজির চাল ৭৫ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত, সেই একই চাল এই সপ্তাহে অর্থাৎ শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চিকন বা সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিকন বা সরু চালের দাম বাড়লেও কমেছে মোটা চাল ও মাঝারি ধরনের চালের দাম।
দুই সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি খোলা চিনির দাম বেড়েছিল ১৫০ টাকা। সে সময় খুচরা দোকানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখন পাইকারিতে বর্ধিত দাম কমলেও খুচরায় ৯০-এ আটকে আছে চিনির দাম। এছাড়া খুচরা বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার অধিকাংশ দোকানে খুচরা এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। যদিও কিছু কিছু এলাকার বাজারে চিনির দাম ২-৩ টাকা কমও রাখা হচ্ছে। তবে সেগুলো ওই বাজারের স্থানীয় পাইকারি দোকান।
অন্যদিকে, রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে পাইকারি পর্যায়ে মণপ্রতি (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগেও ২০০ টাকা বেড়েছিল। সে হিসাবে পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনি সর্বোচ্চ ৮২ টাকা পড়ছে। যা খুচরায় এসে ৮ টাকা ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক মাস আগেও বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। যা এ সময়ের ব্যবধানে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। আর বছরে ব্যবধানে বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত বছর এ সময় চিনির কেজি ৭৭ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ছিল।
গোপীবাগ এলাকার এক চাল ব্যবসায়ী জানান, তারা গত সপ্তাহে মাঝারি সাইজের যে চাল ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, এই সপ্তাহে সেই একই চাল বিক্রি করছেন ৫৮ টাকা কেজি দরে। আর ৭৫ টাকা কেজি মিনিকেট ও নাজির চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘শুধু চিকন চালই নয়, খোলা সাদা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। অর্থাৎ গত
সপ্তাহে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা আটা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি দরে। কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে খোলা ময়দার। গত সপ্তাহে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা ময়দা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।’
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেলও। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ১৯২ টাকা। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকা লিটার। ২ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৩৮৫ টাকা, যদিও গত সপ্তাহে একই পরিমাণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৩৬৫ টাকায়।
দেশি রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ গত সপ্তাহের ৮০ টাকা কেজি দরের রসুন এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি শুকনো মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকার মতো। গত সপ্তাহের ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শুকনো মরিচ এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে জিরার দামও বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকার মতো। গত সপ্তাহের ৪০০ টাকা কেজি দরের জিরা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। ১৩০ টাকা কেজি দরের তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
ফ্রেশ ও মার্কস এই দুই ধরনের গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে ফ্রেশ ৬৭০ টাকা কেজির ফ্রেশ এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ টাকায়। এছাড়া ৬৭০ টাকা কেজি দরের মার্কস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহের ২০০ টাকা কেজি দরের হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। ৪০০ টাকা কেজি দরের দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে চার ধরনের ডালের দাম কমেছে। ১২৫ টাকা কেজি দরের (বড় দানা) ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, একইভাবে ১৫০ টাকা কেজি দরের ডাল (ছোট দানার) ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা কমে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে ১১০ টাকায় পাওয়া যেত মুগ ডাল। কেজিতে দুই টাকা কমেছে অ্যাংকর ডালের। দাম কমার তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজও। গত সপ্তাহে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচের দামও কমেছে। যেভাবে বেড়েছিল, ঠিক সেভাবেই হুট করে কমেছেও। রাজধানীর বাজারগুলোয় দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম নেমেছে অর্ধেকের নিচে। এতে বিভিন্ন বাজারে এক কেজি কাঁচামরিচ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এক কেজি কাঁচামরিচ কিনতে গুনতে হয়েছে ৮০ টাকা। মাস দুয়েক আগে এই কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকার ওপরে উঠে যায়।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর দফায় দফায় বেড়েছিল ডিমের দাম। যার ডজন ওঠে ১৬০ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়নি। এরপর গত সপ্তাহে ডিমের দাম কমে ডজনে ১২০ টাকায় নেমে আসে। অর্থাৎ ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমে গেছে। মুদি দোকানে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা হালি বিক্রি হওয়া ফার্মের মুরগির ডিম এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা হালি।
ডিমের ‘চড়া দামের’ সময় বেড়েছিল ব্রয়লার মুরগির দামও, বিক্রি হয়েছিল ২০০ টাকা কেজিতে। এ সপ্তাহে তা কিছুটা কমেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। একই রকমভাবে বাজারে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। যা কিছুদিন আগেই বিক্রি হতো ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়।
এদিকে বাজারে নতুন সবজি হিসেবে শিম ও ফুলকপি এলেও দাম চড়া। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। এ সবজিটি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৭০, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ ও পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কচুর লতি, ঝিঙে ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতিকজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চাষের শিং মাছ প্রতিকেজি ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। আর ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কৈ মাছ। পাবদা মাছ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এছাড়া চিংড়ি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। আর এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।