Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 4:15 pm

সরকারকে ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় ৭ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:  বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারকে ঋণ দিয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ডলার বিক্রি করে আয় করেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণ দিয়ে আরও দুই হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। সবমিলে গেল অর্থবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে খরচ করেছে ৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। নিট মুনাফা ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। তবে নিট মুনাফার পুরোটাই চলে গেছে সরকারের কোষাগারে। পুরো বিষয়টি মঙ্গলবার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদ। পর্ষদের সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় সব পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে মাত্র ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা; যা বিদায়ী অর্থবছরে হয় ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা বা ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক আয় করে ৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড ডলার বিক্রি ও সরকারকে ঋণ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

অপরদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রেকর্ড ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে পুরো অংশই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া। ওই অর্থবছর ৯৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার ঋণ নেয় সরকার। এই দুই খাত থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছর বেশি আয় করে।

এদিকে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের নগদ লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের আবেদনে করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেটা মঙ্গলবারের বোর্ড সভায় গৃহীত হয়েছে। এর আগে গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদন করা হয়। তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করার আগেই নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সমর্পণের আবেদন করে চিঠি পাঠায়। গত ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানের স্বাক্ষরে ওই চিঠি পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সভায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি মূল্যের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে ব্লুমবার্গ টার্মিনাল স্থাপনে বিষয়টি এজেন্টাভুক্ত থাকলেও আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমদানির বিষয়ে আরও ক্লোজলি মনিটরিং করার জন্য ব্লুমবার্গের সঙ্গে একটি চুক্তি স্থাপন দরকার। যাতে পণ্যের দর সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা যায়। পণ্যের দর সাশ্রয়ী করার ক্ষেত্রে এটা ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে সভায় এজেন্ডা হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অনুকূলে পুনঃঅর্থসংস্থান বাবদ ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ এবং আদায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডকে অর্থায়নের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকে রাখা আমানতের সুদহার হিসাবায়নের ক্ষেত্রে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) পরিবর্তে বেঞ্চমার্ক সুদহার ও মার্জিন নির্ধারণ, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (টিডিএফ ও টিইউএফ) সুদ/মুনাফার হার পুনর্গঠন এবং আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়, ব্যয় ও স্থিতি-সংক্রান্ত বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য বহিঃনিরীক্ষক নিয়োগ ও ফি পরিশোধ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।