নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে স্বল্পসুদে সরকারি আমানতের নিশ্চয়তা চান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীরা। গতকাল বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এবিবির প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এবিবির প্রস্তাবটি সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
জানতে চাইলে এবিবি চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বৈঠক শেষে বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পর্ষদের সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত। আমরা আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আগামী ১ জুলাই থেকে বিনিয়োগের নতুন সুদহার ৯ শতাংশ হবে। এটি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে আমাদের তারল্য জোগান দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য রয়েছে। এসব তারল্যের অংশ আমাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আসতে হবে। আর সেটি ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে। এর বেশি সুদ যাতে সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান তহবিল জোগানে না চায় সেটি সরকারিভাবে জানিয়ে দিতে হবে।
এদিকে বৈঠকের সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এক অঙ্কে ঋণের সুদ নামিয়ে আনার ঘোষণা বাস্তবায়নে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। এজন্য কিছুটা ছাড় দিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনোভাব ও অর্থনীতির স্বার্থে করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাই এবিবির দাবি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটি নিয়ে গভর্নর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন। প্রয়োজনে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায় কি না, সেটিও প্রস্তাব করা হবে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারবে কি না, সেটি নিয়েও বৈঠকে বক্তব্য এসেছে। তাছাড়া অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করলেও অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সেটি আদৌ আমলে নেবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তুলে এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সরকারি ব্যাংক, মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে। যাতে ওইসব প্রতিষ্ঠান তহবিল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বেশি সুদ দাবি না করে।
এবিবির প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বেশ কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সেখানে একই সঙ্গে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও খুব বেশি আইনি ব্যত্যয় বরদাশত করা হবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করছে কি না, সেটি নজরদারি করবে। প্রয়োজনে তাদের কাছে বিতরণ করা ঋণের হালনাগাদ তথ্য চাওয়া হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেন, এবিবি ১ জুলাই থেকে সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে মর্মে আশ্বস্ত করেছে। আমরা বলেছি, ভালো কথা। তবে ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা পরিপালন করতে হবে। ব্যাংকে কোনোভাবে ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। স্বাভাবিক ঋণ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
এছাড়া ঋণের মান নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ আমানত হার যাতে লঙ্ঘন না হয় ও আগ্রাসী ব্যাংকিং করে ব্যাংকে যাতে নতুন সংকট তৈরি করা না হয় সেটিও আমরা জানিয়ে দিয়েছি বলে জানান এস কে সুর।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠকে এবিবির প্রতিনিধিদের খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দিতে বলেছে। এতে তাদের সক্ষমতা বাড়বে। তাছাড়া সম্পদ দায় ব্যবস্থাপনায় সতর্ক থাকতে বলেছে। আর পুরো প্রক্রিয়ার ওপরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর থাকবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, এবিবির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আনিস এ খান, বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম, সদস্য এনআরবি ব্যাংকের এমডি মো. মেহমুদ হুসাইন, ইউসিবিএলের এমডি এ ই এ মুহাইমেন উপস্থিত ছিলেন।

Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 5:48 pm
সরকারি আমানতের নিশ্চয়তা চান ব্যাংকের এমডিরা
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: