গড়ে তুলতে হবে: কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাড়ির আঙিনায়, প্রান্তিক জমিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য চাষ করে মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে কাজ করেন। প্রতি বছর বাংলাদেশে ২০ লাখ করে মানুষ বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজমি কমছে আট লাখ হেক্টর করে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমি লবণাক্ত পানির নিচে চলে যাওয়া ও কল-কারখানা, ইটভাটা এবং বসতবাড়ি নির্মাণই কৃষিজমি কমার প্রধান কারণ। এরপরও কৃষিপণ্যের জনপ্রতি সরবরাহ কমছে না; বরং বাড়ছে। খাদ্যশস্যের আরেকটি বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে সবজি উৎপাদনে। সরকারের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় আর আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে। তার কারণ, অনেকেই ফল বাগানের সঙ্গী ফসল হিসেবেও সবজি চাষ করে থাকেন। সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে ফল উৎপাদনে। বর্তমানে এ দেশে ফলের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন। ফল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারির ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। তারপরও বাংলাদেশের কৃষকরা সব সময় থাকেন চির অনিশ্চয়তার মধ্যে।
অনেক সময় বাজারে কৃষি উৎপাদিত পণ্যর দাম থাকে আকাশচুম্বী। তখন কৃষিপণ্য ক্রয় করতে নাভিশ্বাস উঠে সাধারণ ভোক্তাদের।
শ্রমে-ঘামে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বিক্রয় মূল্যের খুবই কম অংশ কৃষক পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের অনেক বেশি লাভের প্রবণতা থাকায় লাগামহীনভাবে বাড়ে কৃষিপণ্যের দাম। কৃষকরা সরাসরি ভোক্তার
কাছে কৃষিপণ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করার সুযোগ পায় না বলেই মাঝখানে পকেট ভারী হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের। আবার অনেক সময় উক্ত সব উৎপাদিত পণ্য বেশি উৎপাদনের কারণে পণ্য বিক্রয় করতে পারেন না, বা ন্যায্য দাম পান না অথবা পণ্য পচে যায়, তাই তখনও ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।
বাংলাদেশের মানুষের অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার কয়েক শত গুণ বেড়ে গেছে। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় টেকসই (স্থায়িত্বশীল) উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত বা বিষমুক্ত শাকসবজি ও ফল এবং দানাদার শস্যের জোগান নিশ্চিত করতে কৃষকের বাজার প্রতিষ্ঠা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ভোক্তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির ভয় থাকবে না। কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে সরাসরি কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শহর ও মহানগরগুলোতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার প্রতিষ্ঠা করা এখনই দরকার। এসব বাজারে কোনো ধরনের খাজনা ছাড়াই সরাসরি কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। এমনকি কৃষকের বাড়ি থেকে বাজারে পণ্য নিয়ে আসতে পরিবহন সহায়তা নিশ্চিত করলে, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে, কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে এবং ভোক্তারা উপকৃত হবে।
উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বাজারে নিরাপদ কৃষিপণ্য বিক্রির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে হালকা অবকাঠামোর মাধ্যমে এসব বাজার চালু করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে স্থায়ী রূপ পাবে এসব বাজার। মধ্যস্বত্বভোগীদের সংঘবদ্ধ চক্র ভেঙে কৃষক হতে সরাসরি কৃষি পণ্য ক্রয় করতে পারবেন ভোক্তারা। তখন পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য কমানো সম্ভব এবং কৃষিপণ্যের বাজারও নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে। এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন।
সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করলে নিত্যপণ্যের দামও কমবে, ফলে কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ে লাভবান হবে। এজন্য রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারিভাবে কৃষকের বাজার গড়ে তোলা দরকার। লাভের অংশ কৃষকের পকেটে গেলে উৎপাদন বাড়বে। কৃষকরা গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন। কৃষকের বাঁচিয়ে রাখতে ও কৃষিপণ্যের মূল্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করার লক্ষ্যে এবং পণ্য মূল্যের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে কৃষকদের জন্য বাজার প্রতিষ্ঠা করার সময় এখনই।
আ ন ম মাছুম বিল্লাহ ভূঞা
আইনজীবী, ঢাকা