Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:30 am

সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছয় মাসের ব্যবধানে মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন আনল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিবর্তিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ঠিক রেখে সরকারি খাতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করল বাংলাদেশ ব্যাংক।

অপরদিকে বিশ্লেষকরা মুদ্রানীতির এ পরিবর্তনকে দেখছেন জোড়াতালির সংশোধন হিসেবে। তারা বলছেন, এরই মধ্যে সরকারি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এই হার অতিক্রম করে ফেলেছে। অর্থবছর শেষে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও কমে যাবে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানায়। সাধারণত প্রতি ছয় মাস পর মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির গত ৩১ জুলাই এক বছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে মোট অভ্যন্তরীণ খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, আর সরকারি খাতে ধরা হয় ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি রাখা হয় পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে।

পরিবর্তিত মুদ্রানীতিতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করে এটি করা হয়। পরিবর্তিত মুদ্রনীতিতে ঘোষিত সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে উন্নীত করে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়। অপরদিকে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার ঋণ নিচ্ছে বেশি। এতে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে। যদিও বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা রয়েছে, কিন্তু ব্যাংকগুলো দিতে পারছে না। সরকারের এই ঋণ নেওয়ার পরিমাণ এরই মধ্যে অর্থবছরের পুরো লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি সংশোধন বা পরিবর্তন করেছে; কিন্তু ডিসেম্বর শেষে কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা উল্লেখ করেনি। অপরদিকে বেসরকারি খাতেও কতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি। এটা জোরাতালি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে। মুদ্রানীতিতে সংশোধন এনে অযৌক্তিক বিষয়কে যৌক্তিক করার অপচেষ্টা করেছে মাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতিতে নিট বৈদেশিক সম্পদ ধরা হয়েছিল শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। গতকাল তা বাড়িয়ে করা হয় চার দশমিক ২০ শতাংশ। গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করে, বিশ্ব উৎপাদন প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সেবা খাতের অবদান বেশি ও প্রবাসী আয়ের উল্লম্ফনের কারণে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপ) প্রবৃদ্ধি ঠিকই থাকবে। এ কারণে বৈদেশিক সম্পদ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে।

মুদ্রানীতির আটটি সূচকের মধ্যে ছয়টিতেই পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ একই রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশেই রাখা হয়, যদিও এটিকে চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অপরদিকে ঋণ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে নেমে গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রক্ষেপণ ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষে ঋণপ্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ কম।

ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছিলেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই, বরং ৮৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য আছে। তারল্যের মিসম্যাচ রয়েছে অর্থাৎ কোনো ব্যাংকে বেশি রয়েছে, আবার কোনো ব্যাংকে কম।