নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি ব্যয় সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখা তথা কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি দূর করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করার দাবি এসেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। অর্থমন্ত্রী ঘোষিত বাজেট নিয়ে গতকাল রোববার এক ওয়েবিনারে এমন দাবি জানান ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
তিনি বলেন, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহি নেই। এমনকি ব্যবসায়ীদেরও কারও কারও মধ্যে নেই। এটি নিশ্চিত করতে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ হওয়া উচিত, যাতে দুর্নীতি দূর হয়।
একই আলোচনায় দৈনিক প্রথম আলো’র হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম ও ‘সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানান। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রিফ্লেকশন অন বাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অবশ্য পরিকল্পনামন্ত্রী আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মত দেননি।
তবে পরিসংখ্যান-সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের সহায়তাকে স্বাগত জানান তিনি।
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের দেয়া সুবিধার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, কোনো চোর ফিরিয়ে দেয়ার জন্য টাকা চুরি করেনি। ফলে সরকারের সুযোগ দেয়ার ফলে টাকা ফিরে আসার সম্ভাবনা কম বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তিনি বলেন, আমাদের সর্বনাশ আর সুইজারল্যান্ড-বাহামা’র পৌষ মাস। সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনা জীবদ্দশায় আশা করি না। বরং মাঝে মধ্যে যাওয়া-আসা হবে, কিছু মিটিং-সিটিং হবে। কিছু খরচ হবে। তবে তিনি বলেন, বাস্তবতার নিরিখে মন্দের ভালো হিসেবে এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। টাকা এলে ভালো, না এলেও ক্ষতি নেই; যা ছিল তা-ই আছে।
অবশ্য এ সুযোগ এবারই শেষ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, আর যাতে না যায়, সে জন্য শক্ত করে দরজা বন্ধ করতে হবে। আলোচনায় অন্যান্য বক্তারাও পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দেয়াকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণে সতর্কতার ওপর গুরুত্ব দেন। মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যয় বেশি হওয়ায় সঞ্চয় কমে গিয়ে বিনিয়োগ কমতে পারে। এর মধ্যে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস, ফুড প্রোগ্রামের মতো সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বর্তমান বছরের তুলনায় কমে যাওয়াকে (জিডিপির বিবেচনায়) অবাক করা বিষয় উল্লেখ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ আগামী অর্থবছরের জন্য ম্যাক্রো ইকোনমির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের মেম্বার সেক্রেটারি ড. মো. কাউসার আহমেদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার জানে কী করা দরকার। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা (ফিসক্যাল স্পেস) নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী বলেন, পাচার করা অর্থ আনার সুযোগ যাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়, পাশাপাশি সময়ের পর যে সব পাচারকারী সুযোগ নেবে না তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দেন ইআরএফ প্রেসিডেন্ট।