নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে শেয়ার সরবরাহ বাড়াতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সরকারি কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোড করতে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করছে সংস্থাটি। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে অর্ধযুগ আগে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো আলোর মুখ দেখেনি।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি ২৬ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ওই সময় সে উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বাজারে ভালো শেয়ারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। এরপর সংকট কাটাতে সরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ শুরু হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বার বার বৈঠক করলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসির নিজস্ব ভবনে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কর্মশালায় পুঁজিবাজারের উপযোগিতা ও উপকারিতাসহ শেয়ার অফলোডের বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’
এদিকে কর্মশালাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কমিশনের ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক বিএসইসির পরিচালক কামরুল আনাম খান। অন্য সদস্যরা হলেন সংস্থাটির পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন খান, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও সহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম মাওলা। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বিএসইসির লাইব্রেরিয়ান মো. আনোয়ার হোসেনকে।
সরকারি কোম্পানি শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার সময় বেঁধে দিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, তিনি কোনোবারই কথা রাখতে পারেননি বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে কমে যাবে। কোম্পানিগুলোর জবাবদিহির কারণে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বেড়ে যাবে।’ পুঁজিবাজারের স্বার্থে ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভালো দামের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় এতদিন শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি ঝুলে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজার চাঙা হয়েছে। ফলে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। এতে বিনিয়োগকারী ও সরকার উভয়েরই লাভ। সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এসব বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড করার জন্য সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। শুধু ঘোষণা আর বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। একই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও দূর করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ কাজটি সম্পাদন হবে না বলে মনে করেন তিনি।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশার দিক হলো, ধীরে ধীরে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বিএসইসি এ বিষয়ে আন্তরিক হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসবে। আরও গতিশীল হবে দেশের পুঁজিবাজার।
নির্ধারিত সময়ে সরকারি শেয়ার ছাড়া সম্ভব হলে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃষ্টান্ত হতো উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে ভালো শেয়ারের অভাবে বাজারে বিপর্যয় হয়েছে। কারণ বাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী এসেছে, বিপরীতে ওই পরিমাণ ভালো শেয়ার ছিল না। ঋণ নয়, পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে সরকারও পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের কাজ করতে পারত।’
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ২৬ কোম্পানির মধ্যে ২১টিরই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। তালিকাভুক্তির নির্দেশনায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধীনে রয়েছে ১৩ কোম্পানি। বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শেয়ার অফলোডের বিষয়ে সময় চেয়েছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায় না। কোম্পানিটি শেয়ার অফলোডের তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়কে। জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেম লিমিটেড ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা লাভজনক হবে না বলে জানিয়েছে।