সরকারি চাকরিতে কোটা যেন ন্যায্যতার পরিপন্থি না হয়

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে। ঢাকা এবং সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গন উত্তাল হয়ে উঠেছিল। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের দমনপীড়নেও সেই আন্দোলন এতটুকু স্তিমিত হয়নি; বরং আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। ওই সময় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে দিয়েছিল সরকার। যদিও সে সময়কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাননি, চেয়েছিলেন সংস্কার।

সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় নেমেছেন। কোটা কতটা ন্যায়সঙ্গত, সেটি যৌক্তিক প্রশ্ন বটে। আবার বৈষম্যের বিষয়ও সামনে আসে। চাকরি পাওয়ার অধিকার নিয়ে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট প্রণিধান যোগ্য: ২৯. (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে; (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জš§স্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। এর বাইরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রটি কেমন হবেÑসে প্রসঙ্গে মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের কথা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, মানবিক হয়ে উঠতে চাইলে রাষ্ট্রকে শুধু সাম্য (ইকুয়ালিটি) নিশ্চিত করলেই চলবে না, নিশ্চিত করা উচিত ন্যায্যতাও (ইকুইটি)। যে মানুষটি জš§সহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়ে, সেই মানুষটির অনুকূলে রাষ্ট্রের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে। সমাজে অনগ্রসর গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোটা সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি। কিন্তু অতিরিক্ত কোটা যোগ্যদের বঞ্চিত করতে পারে, তাদের অন্যায্য উপায়ে অর্থ উপার্জনে প্ররোচিত করতে পারে; যা সভ্য সমাজের জন্য প্রত্যাশিত নয়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতে পারে, সেটি অনন্তকালের জন্য হতে পারে না। কোটা যদি মানুষকে পর মুখাপেক্ষী করে তোলে, তবে সেই কোটা আদৌ কল্যাণকর নয়।

সংবিধানমতে, সরকার কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করে দিলে সেটা পুনর্বহালের জন্য আদালতে যাওয়াটা অযৌক্তিক। কারণ, ১ শতাংশ কোটাও না থাকা কোনোভাবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। জাতি কি শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করবেÑএমন প্রশ্নও তুলছেন কেউ। কোটা দিলেই তাদের সম্মানিত করা হবে, এমন কথা অবশ্য কেউ বলেননি। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়ার আগে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল।

এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা বাদ দিয়ে আর কোনোটিকে ‘নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। সেটা মুক্তিযোদ্ধা কোটা হোক, হোক জেলা কোটা কিংবা নারী কোটা। কোটায় কেউ যেন বঞ্চিত না হন, সেটিই প্রত্যাশিত। সরকারি চাকরিতে কোটা ন্যায্যতার পরিপন্থি না হলেই এ নিয়ে বিভাজন থাকবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০