পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা ভালো কোম্পানির অভাব। বাজারে যেসব কোম্পানি আসছে সেগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ওইসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে আসে কিন্তু পরে খোঁজ থাকে না। ফলে ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক বছর ধরে সরকারি বড় সংস্থাগুলোয় বিনিয়োগ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। যদি সরকারি বিনিয়োগ বাজারে না আসে সেক্ষেত্রে বাজার ভালো করা যাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এবং একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বাজেটের আকার বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই রাজস্ব আয় বাড়ার প্রত্যাশা করা হয়। উন্নয়ন এবং ওই বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় বাড়তে হবে। কিন্তু যে হিসাবে বাজেটের আকার বাড়ছে সে হিসাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। দেশের অর্থনীতির আকার ঠিকই বাড়ছে এবং এর সঙ্গে জিডিপিও বাড়ছে কিন্তু ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বলতে যেটা বোঝায় সেভাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। রাজস্ব আয় বাড়ছে না বলে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। এ অনুপাত আট শতাংশ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতির আকার অনুযায়ী ট্যাক্স জিডিপি রেশিও হওয়ার কথা ১৬ শতাংশ। এটা আসলে বিবেচনায় আনা দরকার। বিশেষ কয়েকটি কারণে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যাচ্ছে না। প্রতিবারেই বলা হয় ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে অর্থাৎ করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু সঠিকভাবে সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আসলে এখানে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব রয়েছে অনেক।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বড় সমস্যা হচ্ছে ভালো কোম্পানির। কয়টি ভালো মানের কোম্পানি বাজারে আসছে বা আনার চেষ্টা রয়েছে? বাজারে যেসব কোম্পানি আসছে সেগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ওইসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে আসে কিন্তু পরে কোম্পানিগুলোর কোনো খোঁজ থাকে না। ফলে ওই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক বছর ধরে সরকারি বড় সংস্থাগুলোয় বিনিয়োগ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না। যদি সরকারি বিনিয়োগ বাজারে না আসে সেক্ষেত্রে বাজার ভালো করা যাবে না। অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে। এখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে উচ্চপর্যায় থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আবার কয়েক বছর ধরে ডিএসই’র যে পরিমাণ রাজস্ব আসার কথা সেটা কমে যাচ্ছে। বাজার ভালো করতে হলে বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগকারীর আস্থা তৈরি করতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন উৎসাহিত হবে না।
কাজী আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের কোনো খাত নেতিবাচক অবস্থানে নেই। নির্বাচনের পর বাজার ভালো হবে সবাই এটা মনে করেছিল। তবে কয়েকদিন বাজার গতিশীল থাকলেও এখন নির্বাচনের আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। সূচক, টার্নওভার এবং কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পুঁজিবাজারকে ঢেলে সাজাতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যতে এর চরমমূল্য দিতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ