সরকারি সংস্থাগুলো ‘হায়েনার মতো’ ঝাঁপিয়ে পড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির পর ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সরকারি সংস্থাগুলোর চালানো অভিযানকে ‘হয়রানি’ বলছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে অভিযানের নামে সারা ঢাকা শহরে একটি তাণ্ডব চলছে। আজকে (মঙ্গলবার) সকালে নবাবী ভোজ নামের একটি রেস্তোরাঁ বন্ধ করেছে। অথচ এ রেস্তোরাঁয় সরকারের প্রয়োজনীয় ১২টি সংস্থার লাইসেন্স রয়েছে। এখন রাজধানীর সব রেস্তোরাঁয় সিটি করপোরেশন, রাজউক বা সরকারের আরও অনেক সংস্থা হয়রানি করছে। এখন যে পরিমাণ হয়রানি আমাদের করা হচ্ছে, এটা আসলে কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। আমি বলি হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’

রাজধানীতে অভিযানে এ পর্যন্ত ৪২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন বলছে, গ্যাস সিলিন্ডারেরও লাইসেন্স লাগবে। সিলিন্ডার কি আমরা বানিয়েছি? সিলিন্ডার তো বাজার থেকে নিয়েছি। তাহলে যারা সিলিন্ডার বিক্রি করছেন, তারা কি লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করছেন? আমরা আর কত লাইসেন্স দেখাব।’

গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যায়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না। কিন্তু আট তলা ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান।

ভবনে ছিল না কোনো ফায়ার একজিট। একমাত্র সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারসহ রেস্তোরাঁর মালামাল। কাচে ঘেরা ভবনের ওপরের ফ্লোরগুলো থেকে নামতে না পেরে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অধিকাংশের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনার পর ধানমন্ডি, খিলগাঁও, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় একই রকম অনিরাপদ পরিবেশে ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে। সমালোচনার মুখে রোববার থেকে রাজধানীতে যে যার মতো করে অভিযানে নামে রাজউক, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র‌্যাব।

আবাসিক ভবনে নিয়মের বাইরে গিয়ে বানানো রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এসব অভিযানে, আবার কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তার ও জরিমানাও করা হচ্ছে।

গত সোমবার ঢাকার ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের গাউছিয়া টুইন পিক ভবনে অভিযান চালিয়ে সব রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয় রাজউক।

আর বাণিজ্যিক অফিস করার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ চালানোয় জিগাতলার কেয়ারি ক্রিসেন্ট টাওয়ার বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

যেখানে আলোচনার সূত্রপাত, মঙ্গলবার সেই বেইলি রোডে যান রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ‘একিউআই’ শপিং মলের বেজমেন্টে রেস্তোরাঁ চালানোয় ‘নবাবী ভোজ’ নামে একটি খাবারের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়।

এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন খিলগাঁওয়ের ‘নাইটিঙ্গেল স্কাইভিউ’ নামে একটি বহুতল ভবন সিলগাল করে দিয়েছে। ওই ভবনের একটি তলা বাদে সব কয়টিতে রেস্তোরাঁ রয়েছে।

টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযানে ‘ঢালাওভাবে’ সিলগালা না করে সুষ্ঠুভাবে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনায় টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছে মালিক সমিতি।

সমিতির নেতা ইমরান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর টাস্কফোর্স গঠন করে আগামী তিন থেকে ছয় মাসের সব রেস্তোরাঁকে কমপ্লায়েন্সের (সুনির্দিষ্ট নির্দেশাবলি) আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করতে হবে। এই টাস্কফোর্সে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে লোক থাকতে হবে। টাস্কফোর্সে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির লোক থাকবে, প্রয়োজনে এফবিসিসিআই এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞ থাকবে।’

গঠিত টাস্কফোর্স তিন থেকে ছয় মাস ধরে একটি কমপ্লায়েন্স তৈরি করবেÑ এমন প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, ‘সেই কমপ্লায়েন্স পূরণ করতে পারলে রেস্তোরাঁ মালিক ব্যবসা করবে। নির্দিষ্ট একটা সময় দেবে, এর মধ্যে কমপ্লায়েন্স পূরণ করতে না পরলে আমরা ব্যবসা বন্ধ করে দেব। তবে যাদের যেভাবে সময় প্রয়োজন, কারও এক মাস, কারও তিন মাস সময় দিতে হবে। দেশের রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি মিলে একটি নিরাপদ খাতে উন্নীত করতে হবে।’

রেস্তোরাঁ ব্যবসায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করে ইমরান বলেন, ‘গতকালকে (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি এবং রিসিভ করিয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে চাই।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০