সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনতেন সারোয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যাপ্ত আইসিইউ চিকিৎসাসেবা রয়েছে, এমন আশ্বাস দিয়ে দালালচক্রের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল থেকে নিজের ক্লিনিকে রোগী ভাগিয়ে আনতেন গোলাম সারোয়ার (৫৭)। তিনি ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একটি শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের সময় গোলাম সারোয়ারের মালিকানাধীন হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পান র‌্যাবের সদস্যরা।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ থেকে দাবি করা টাকা দিতে না পারায় আয়েশা আক্তার নামে এক নারীর দুই যমজ সন্তানকে আইসিইউ থেকে বের করে দেয়া হয়। এমনকি টাকা দিতে না পারায় ওই নারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তাও করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার। পরে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন আয়েশা আক্তার এবং ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে ওই হাসপাতালের ফার্মেসির বিল পরিশোধ করেন। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে জমজ দুই শিশুর মধ্যে এক শিশু মারা যায় তার। এ ঘটনার পর পরই শিশুটির মা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। অপর শিশুকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে ভর্তি করান। বর্তমানে শিশুটি আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ আছে।’

র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত গোলাম সারোয়ার জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালে তিনি প্রাণিবিদ্যায়মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০০০ সাল থেকে প্রায় ছয়টি (রাজারবাগ, বাসাবো, মুগদা, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকায়) হাসপাতাল ও ডায়াগোনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত প্রায় এক বছর ধরে শ্যামলীতে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। আগেকার অভিজ্ঞতা থেকে এই হাসপাতালের সঙ্গেও দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম সারোয়ার জানান, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের দালালের মাধ্যমে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যখনই তদারকি এবং মনিটরিংয়ের জন্য লোকজন আসত, তখন বাইরে থেকে চিকিৎসক ও নার্স এনে সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখা হতো। অন্যান্য সময় হাসপাতালটি ফাঁকা পড়ে থাকত। চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো ব্যবস্থাও থাকত না।

র‌্যাব জানায়, হাসপাতাল পরিচালনার বিধি অনুযায়ী সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকার কথা থাকলেও তাদের হাসপাতালে মাত্র একজন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকত। হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউসহ ৩০টি বেডের অনুমোদন রয়েছে। তবে এই হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ রয়েছে। অর্থাৎ চারটি আইসিইউ বেশি। এছাড়া ভেন্টিলেটর রয়েছে দুটি। ৯টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউভেটর আছে মাত্র একটি। ১৫টি সাধারণ বেড রয়েছে। মূলত আইসিইউ-কেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে তিনি অবৈধ ব্যবসা করে আসছিলেন বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

অনুমোদন পাওয়ার শর্ত না মেনেও কী করে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছে সে ব্যাপারে র‌্যাব কোনো তথ্য পেয়েছে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, বিগত সময়ে যখনই অনিয়ম-প্রতারণা ও রোগী জিম্মির বিষয়টি সামনে এসেছে তখনই তিনি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ করেছেন। এরপর নতুন নামে ফের আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। তিনি যখন অনুমোদন পান তখন হয়তো সেই ধরনের শর্তপূরণের বিষয়টি তিনি ইন্সপেক্টশনে দেখিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানের সময় ছিলেন, তারাও নিশ্চয় বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন। আমরা বিশদ জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি জানার চেষ্টা করব।

তিনি আরও বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। যেহেতু জোরপূর্বক নির্যাতন করে বের করে দেয়ায় যমজ এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে হত্যার অভিযোগ আনা হবে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি দেখবেন। যেহেতু এখানে পোস্টমর্টেমের বিষয় আছে। মামলায় ভুক্তভোগী মাও অভিযোগ করেছেন যে, তাকেসহ যমজ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্তে ও ময়নাতদন্তে তা উঠে আসলে অবশ্যই হত্যার বিষয়টিও অভিযোগপত্রে আসবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০