সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ আট লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া পুঞ্জীভূত ঋণ আট লাখ সাড়ে ৭৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এক বছরে এ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ এক লাখ চার হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে প্রায় এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের একই সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা কিছুটা কমেছে।

সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯৩ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ নেয়া কমেছে ২৩ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার ট্যাক্স জিডিপি বাড়াতে না পারার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নেই। তাই সরকারকে ঋণ দিতে পারছে। তার মানে সব সময় দিতে পারবে তা নয়।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ মার্কেট ঠিক হলে তখন বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা বাড়বে। তখন ঋণ দেয়ার চাপ থাকবে। ওই সময় ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে না পারলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আর সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকতে হবে। ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যাংকে শোধ করলে কোনো লাভ নেই।
তথ্য বলছে, বর্তমানে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের সবচেয়ে বেশি ব্যাংকবহির্ভূত খাতে। অর্থাৎ গত এপ্রিল শেষে সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ড বিক্রি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৪৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা।

এদিকে সরকার চলতি অর্থবছর ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা কমিয়েছে। মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সরকার ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকে সরকারের ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া গত জুলাই-এপ্রিলে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কমলেও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার মোট ১৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল পাঁচ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
এদিকে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট থাকা সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা আরও ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। ঘাটতি বাজেট মেটাতে আগামী অর্থবছরে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ঘোষিত বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০