Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:25 pm

সরকারের ঋণগ্রহণ অর্থনীতির ওপর যেন চাপ না বাড়ায়

প্রতি বছর সরকারের বাজেট বড় হচ্ছে। তবে বাজেটের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বড় হচ্ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ। আবার উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা খাতে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণও বাড়ছে। সব মিলিয়ে সরকারের ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে প্রতি বছর বাড়ছে। গত অর্থবছর শেষে তা প্রায় ৪০ শতাংশে ঠেকেছে। শুক্রবার ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সহযোগী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ ছিল ১৬৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ও বৈদেশিক ঋণ ৭৪ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার।

উন্নয়ন বাজেটসহ যে কোনো ব্যয় নির্বাহে সরকারের প্রধান আর্থিক জোগান আসে রাজস্ব সংগ্রহ থেকে। রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। খরচের পাশাপাশি ব্যাংকঋণও বেড়ে চলেছে। পুরো বছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, অর্থ বছরের ছয় মাস না যেতেই তার পুরোটা গ্রহণের দৃষ্টান্তও রয়েছে।

আগামী বছরেই সুদ পরিশোধ খাতে সরকারি ব্যয়-বরাদ্দ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। শুধু বৈদেশিক ঋণের সুদাসলে কিস্তি পরিশোধ বর্তমান বাজেটের আনুমানিক দুই বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে হয়তো ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারের মোট ঋণ সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়া বর্তমান পর্যায়ে খুবই গুরুত্ববহ। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মোট ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ১৬৬.৬৬ বিলিয়ন ডলারে। ১ ডলারের দাম কমবেশি বাংলাদেশ ব্যাংক-নির্ধারিত ১১৫ টাকা ধরে হিসাব করলে টাকার অঙ্কে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাজেট ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারকে দেশের ব্যাংক খাত থেকে আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হবে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাংকগুলো পূরণ করতে পারবে কি না, সেটিও বড় প্রশ্ন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের নানা সূত্র থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের অদম্য আগ্রহ। বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণও বেড়ে যাচ্ছে। এসব ঋণের গ্যারান্টার হতে হয় সরকারকে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে কীভাবে থামানো হবে, সে প্রশ্নও উঠছে।

রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ বিকল্প উৎস থেকে আয়ের সংস্থান না করে এভাবে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া উদ্বেগজনক। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় বৈদেশিক ঋণের সুদ বেড়েছে, শর্তও কঠিন হয়েছে। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ব্যাংক খাতও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ব্যাংক খাতে সরকারের অতিনির্ভরতায় বেসরকারি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ উদ্যোক্তাদের চেয়ে বেশি ঋণ পাচ্ছে সরকার। বন্ডবাজার, সঞ্চয়পত্র বিক্রি, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে কিংবা বিকল্প উপায়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয় বিবেচনা করতে পারে  যা-ই করা হোক, সরকারের ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।