Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:30 pm

সরকারের ঋণ জিডিপির ৪০ শতাংশে ঠেকেছে

বিশেষ প্রতিনিধি: প্রতি বছর সরকারের বাজেট বড় হচ্ছে। তবে বাজেটের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বড় হচ্ছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ। আবার উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা খাতে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণও বাড়ছে। সব মিলিয়ে সরকারের ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে প্রতি বছর বাড়ছে। গত অর্থবছর শেষে তা প্রায় ৪০ শতাংশে ঠেকেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গতকাল সংস্থাটি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপি অনুপাত গত অর্থবছর দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৭। তবে এটিকে নিম্ন ঝুঁকির বলে মনে করছে আইএমএফ। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক ঋণের ঝুঁকি (ডেট ডিসট্রেস) এখনও নিম্ন বলেই উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

আইএমএফের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছর বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ছিল ৩৪ দশমিক ৫। ২০২০-২১ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৬, ২০২১-২২ অর্থবছর ৩৭ দশমিক ৯ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর ৩৯ দশমিক ৮। অর্থাৎ গত অর্থবছর সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। আর চলতি অর্থবছর ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৪১ দশমিক ৪ দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর সরকারের বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত ছিল ১৪ দশমিক ৬। ২০২০-২১ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১, ২০২১-২২ অর্থবছর ১৫ দশমিক ৪ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর ১৭ দশমিক ৭। অর্থাৎ গত অর্থবছর বিদেশি ঋণ গ্রহণের হার অনেক বেড়ে গেছে। আর চলতি অর্থবছর সরকারের বিদেশি ঋণ-জিডিপি অনুপাত বেড়ে ১৮ দশমিক ১ দাঁড়াবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

আইএমএফের তথ্যমতে, গত অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার ও বৈদেশিক ঋণ ৭৪ দশমিক ০১ বিলিয়ন ডলার। আর গত অর্থবছর সরকারকে ঋণ শোধ করতে হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ শোধ করতে হয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার ও অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ঋণের ১৪ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ট্রেজারি বিল রয়েছে ১১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের, ট্রেজারি বন্ড ৩৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন, সুসুক ১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন, সঞ্চয়পত্র ৩৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন, সভরেন গ্যারান্টিকৃত ঋণ ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ও সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রাচ্যুইটি ও প্রভিডেন্ড ফান্ড ৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের।

অন্যদিকে বিদেশি ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৭১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মধ্যে বহুজাতিক উৎস থেকে নেয়া ঋণ ৩৮ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার ও দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে নেয়া ঋণ ২৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

বহুজাতিক উৎসের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ১৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার, এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) ১৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন, আইএমএফের ঋণ ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন এবং এআইআইবি (এশিয়ান ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক) ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন উল্লেখ্যযোগ্য।

দ্বিপক্ষীয় উৎসের মধ্যে ঋণের সবচেয়ে উৎস জাপান। দেশটি থেকে বাংলাদেশের গৃহীত ঋণের পরিমাণ ১১ বিলিয়ন ডলার। আর রাশিয়া থেকে নেয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ও ভারত থেকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত অর্থবছর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সরকার সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে সঞ্চয়পত্রের ঋণ, যার পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ট্রেজারি বন্ডের ৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আর বৈদেশিক উৎসের মধ্যে সবচেয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে এডিবির ৯৩৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের ৬৮৭ মিলিয়ন ডলার ও আইএমএফের ২৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ উল্লেখ্যযোগ্য।