ঘাটতি বাজেট পূরণে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) মত দিয়েছে; এর ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ঘাটতি হতে পারে। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি বলেছে, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে, যে চাপ শেষ পর্যন্ত ভোক্তা বা জনগণকে বহন করতে হয়। এমসিসিআই মনে করে, এই দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথভাবে সমন্বয় করতে হবে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে যেতে পারে বলে সংগঠনটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
এমসিসিআই সদস্যরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে অভিমত দিয়েছে বলেই ধারণা। উন্নয়ন বাজেটসহ যে কোনো ব্যয় নির্বাহে সরকারের প্রধান আর্থিক জোগান আসে রাজস্ব সংগ্রহ থেকে। রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে হয়। বাস্তবতা হলো খরচের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণও বেড়ে চলেছে। পুরো বছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, অর্থ বছরের ছয় মাস না যেতেই তার পুরোটা গ্রহণের দৃষ্টান্তও রয়েছে।
রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ বিকল্প উৎস থেকে আয়ের সংস্থান না করে এভাবে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া উদ্বেগজনক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকটসহ নানা কারণে অর্থনীতি একপ্রকার বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় ব্যাংকের টাকা উৎপাদনশীল খাতের চেয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ হওয়া দুঃখজনক। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় বৈদেশিক ঋণের সুদ বেড়েছে, শর্তও কঠিন হয়েছে। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্যাংক খাতও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
ব্যাংক খাতে সরকারে অতিনির্ভরতায় বেসরকারি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে। কেননা উদ্যোক্তাদের চেয়ে বেশি ঋণ পাবে সরকার। এভাবে চলতে থাকলে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা চাহিদামতো ঋণ পাবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বর্তমানে কমবেশি আমানত সংকটে রয়েছে ব্যাংকগুলো। অবশ্য জোর করে সুদহার কমিয়ে দেয়ায় ব্যাংকে আমানত না আসার জন্য সরকারকেই দায়ী করেন অর্থনীতিদিরা। ব্যাংক খাত যাতে টিকে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে আগে। যেসব সুদ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, তা সরকারকে বহন করতে হবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে দায়িত্বশীল হতে হবে। করমেলায় যে ধরনের সেবা দেয়া হয় অন্য সময় সে ধরনের সেবা নিশ্চিত করা গেলে করযোগ্য ব্যক্তিরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই কর দেবেন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হলে সরকারের ব্যাংকঋণও কমে আসবে। একটি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে ভারসাম্যের বিধান করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রাষ্ট্রের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ঋণ ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ যেহেতু বেসরকারি খাত নির্ভর অর্থনীতির দেশ, কাজেই এখানে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। কিন্তু সরকারের ঋণ গ্রহণের যে পরিস্থিতি তাতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।