Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:22 am

সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না এলপিজি

ইসমাইল আলী: আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে দেশে প্রথমবারের মতো বোতলজাত এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ও অটোগ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মাসে ১২ কেজি বেসরকারি এলপিজির দাম হবে ৯৭৫ টাকা। গত ১২ এপ্রিল থেকে এ দাম কার্যকর করা হয়েছে।

যদিও ১০ দিন পেরুলেও সে দাম মানছেন না রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার এলপিজির ডিলাররা। এলাকাভেদে ১২ কেজি এলপিজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এ বিষয়ে বিইআরসিতে লিখিত অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

গত ১২ এপ্রিল বিইআরসির জারি করা আদেশে বলা হয়েছিল, রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির মূসকসহ দাম হবে প্রতি কেজি ৭৯ টাকা এক পয়সা। আর বেসরকারি বোতলজাত এলপিজির প্রতি কেজির দাম হবে মূসকসহ ৮১ টাকা ৩০ পয়সা। এর মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটর চার্জ (পরিবহন ব্যয়সহ) প্রতি কেজিতে দুই টাকা ও রিটেইলার চার্জ দুই টাকা ২৫ পয়সা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দাম নির্ধারণের ঘোষণায় বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বলেন, মার্চে মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানি কোম্পানি সৌদি আরামকোর প্রোপেনের দাম প্রতি টন ৬২৫ ডলার ও বিউটেনের দাম প্রতি টন ৫৯৫ ডলার বিবেচনায় নিয়ে এবং এলপিজিতে ৩৫ অনুপাত ৬৫ হারে প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ বিবেচনায় নিয়ে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি মাসে সৌদি আরামকো তাদের দাম সংশোধন করে। আরামকোর সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজন হলে বাংলাদেশেও প্রতি মাসে এলপিজির দাম পুনর্নির্ধারিত হবে। প্রতি মাসের নির্ধারিত সময়ে বিইআরসি তা জানিয়ে দেবে।

দাম নির্ধারণের আদেশ বলা হয়, বেসরকারি এলপিজি মজুদ ও বোতলজাতকরণ পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম ৭১ টাকা ৮৭ পয়সা। এর সঙ্গে পাঁচ টাকা ১৮ পয়সা মূসক যুক্ত হয়ে দাঁড়ায় ৭৭ টাকা পাঁচ পয়সা। আর ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলার চার্জ যোগ করে প্রতি কেজির দাম পড়বে গ্রাহক পর্যায়ে ৮১ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ ১২ কেজির এলপিজির কোম্পানি পর্যায়ে দাম রাখা হবে ৮৬২ টাকা। এর সঙ্গে ৬২ টাকা মূসক যুক্ত হবে। আর ডিস্ট্রিবিউটর চার্জ ২৪ টাকা ও রিটেইলার চার্জ ২৭ টাকা যোগ হবে। সে হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ১২ কেজির এলপিজির (বোতল ছাড়া) দাম হবে মূসকসহ ৯৭৫ টাকা।

বিইআরসি সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৩৪টি কোম্পানি বোতলজাত এলপিজি সরবরাহ করছে। কোম্পানিগুলোর সরবরাহকৃত প্রতি কেজি এলপিজি মূসকসহ দাম নিচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৪০ টাকা। এর সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউটর চার্জ ২৪ টাকা ও রিটেইলার চার্জ ২৭ টাকা যোগ করলে ১২ কেজি এলপিজির দাম পড়ার কথা ৯৫১ থেকে ৯৯১ টাকা।

যদিও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ডিলাররা এর চেয়ে বেশি দাম এলপিজি বিক্রি করছেন। এর মধ্যে বিইআরসির ঠিক পেছনে অবস্থিত রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারেই কমিশনের নির্ধারিত মূল্য মানা হচ্ছে না। গতকাল কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে বিভিন্ন ডিলারের কাছে এলপিজির ভিন্ন ভিন্ন দাম দেখা যায়। এর মধ্যে অর্ণা এন্টারপ্রাইজে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল এক হাজার টাকা, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজে এক হাজার ৫০ টাকা ও পেট্রোম্যাক্স এলপিজিতে এক হাজার ২৫০ টাকা।

এদিকে তেজগাঁও এলাকার তেজকুনী পাড়া বাজারে অবস্থিত রিংকু এলপিজিতে ১২ কেজি এলপিজির দাম রাখা হয় এক হাজার ৫০ টাকা ও নাখালপাড়ার মেসার্স গোলজার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানেটারিতে এক হাজার ১০০ টাকা। আর যাত্রাবাড়ীর ছনটেক এলাকায় গতকাল জুতি গ্যাস ভাণ্ডারে ১২ কেজির এলপিজির দাম রাখা এক হাজার ৫০ টাকা। যদিও এর সঙ্গে হোম ডেলিভারি চার্জ ৫০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করে ডিস্ট্রিবিউটররা।

আবার পুরোনো ঢাকার বংশালের মাজেদ সরদার রোডে অবস্থিত আউয়াল এন্টারপ্রাইজে গতকাল ১২ কেজি এলপিজির দাম রাখা হয় এক হাজার ১০০ টাকা, আগামাসী লেনের মা এন্টারপ্রাইজে এক হাজার ১৫০ টাকা ও আগাসাদেক রোডের আকাশ এন্টারপ্রাইজে এক হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া বঙ্গবাজার এলাকায় অবস্থিত আনন্দ বাজারের রহমান এন্টারপ্রাইজে ১২ কেজির এলপিজির দাম রাখা হয় এক হাজার ৫০ টাকা।

বিইআরসির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখার কারণ জানতে চাইলেÑআউয়াল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আউয়াল হোসেন জানান, ওমেরা এলপিজি কোম্পানি ১২ কেজি এলপিজির দাম রাখছে এক হাজার ৫০ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ও পরিবহন চার্জ যোগ করে ডিস্ট্রিবিউটররা এক হাজার ১০০ টাকা রাখেন। আর বাসায় পৌঁছে দিলে আরও ৫০ টাকা হোম ডেলিভারি চার্জ অতিরিক্ত নেয়া হয়।

যদিও এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন ওমেরা এলপিজির প্রতিনিধিরা। পুরান ঢাকায় কোম্পানিটির ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে থাকায় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিইআরসির নির্ধারিত দরেই ওমেরা এলপিজি সরবরাহ করছে। ডিস্ট্রিবিউটররা বেশি মুনাফা করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, বিইআরসির নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কোনো ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে লিখিত বা সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সারাদেশে সরাসরি বাজার মনিটরিং করা কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য ভোক্তাদের সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তাই এলপিজি বিক্রিতে যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ সরাসরি কমিশনকে জানানোর আহ্বান করেন তিনি।

কোম্পানিগুলো কমিশনের নির্ধারিত দরেই বাজারে গ্যাস সরবরাহ করছে জানিয়ে মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ৩৪টি কোম্পানি বর্তমানে ৯০০ থেকে ৯৪০ টাকায় বাজারে গ্যাস সরবরাহ করছে। এছাড়া চলতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম কমেছে। ফলে দেশে আগামী মাসে এলপিজির দাম আরও কমানো হবে। আবার আগামী মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে দামের কী পরিবর্তন হয়, তার ওপর নির্ভর করবে পরের মাসের দেশের বাজারের চিত্র। প্রতি মাসে দাম পুনর্নির্ধারণ করা দরকার হতে পারে।