সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ পুঁজিবাজার ও ব্যাংক সমস্যার সমাধান

২০১৮ সালে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজারের দুর্বলতা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ ওইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারে সমস্যা দূর করা। আবার দেশে একটি গ্রুপ রয়েছে যারা কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছে। এটি কোনো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেই কাম্য নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো ছিল। সরকারি তথ্য মতে, জিডিপির গ্রোথ ছিল সাত দশমিক আট শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৮ সালে অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক ছিল। তবে ২০১৯ সালে অর্থনীতির বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের ইশতেহারে ১০ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ ছিল। অর্থাৎ ১০ শতাংশ জিডিপি গ্রোথের জন্য দেশে আনুপাতিক হারে ৪০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ দরকার। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক দুই শতাংশ। এখন কথা হচ্ছে, ৩১ দশমিক দুই শতাংশ বিনিয়োগ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগে যাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। এখানে আরেকটি ভাবার বিষয় হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। অর্থাৎ দেশে জিডিপির গ্রোথ অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে গ্রোথ রয়েছে। ২০০৯ অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ দশমিক দুই শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এ ৯ বছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র এক দশমিক তিন শতাংশ। দেশে জিডিপির গ্রোথ অনুযায়ী এটি মোটেই কাম্য নয়। তাই বেসরকারি খাতে কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায় সেটাও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাত একটি নাজুক অবস্থানে রয়েছে। কারণ ২০১৮ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। এর ফলে কিছু ব্যাংকের এডিকোয়েসি রেশিও ও প্রভিশনে ঘাটতি রয়েছে, আমানতের পরিমাণ এবং জনগণের আস্থা কিছুটা কমার ফলে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আবার বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাচ্ছে ও ক্যাপিটাল মার্কেট তেমন ভালো অবস্থানে নেই। মূলত ব্যাংকগুলোই হচ্ছে বিনিয়োগের উৎস। তাই ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। যাতে করে ব্যাংকের ঋণ দেওয়া ও আদায়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব না পড়ে এবং আইনের যে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে, এর কারণে ঋণখেলাপিরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এদিকে সরকারকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
২০১৮ সালে সূচক কমেছে প্রায় এক হাজার পয়েন্ট। এ সময় সূচক পাঁচ হাজার ২০০ থেকে পাঁচ হাজার ৪০০ এর মধ্যে ছিল। গড় লেনদেন, বাজার মূলধন এবং বেশিরভাগ শেয়ারের দাম কম ছিল। এ হিসাব বিবেচনা করলে পুঁজিবাজারের অবস্থা তেমন ভালো বা খারাপ বলা যাবে না। তবে ২০১৮ সাল বিনিয়োগের সময় ছিল। যেহেতু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ছিল এবং বছরের শুরুতে ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে, আমার মনে হয় ২০১৯ সালে পুঁজিবাজার ভালো যাবে।
মাহমুদ হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে দেশ ২০১৮ সালে অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে ছিল। প্রথমত, মুদ্রাস্ফীতি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কারণ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা ছিল। দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিল, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ আসার জন্য ভালো। যেহেতু একই সরকার আবার সরকার গঠন করছে, এতে তাদের যে পলিসিগুলো রয়েছে সেগুলোর ধারাবাহিকতা চলবে। আশা করা যায় তাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাপিটাল মার্কেটের দুর্বলতা নিয়ে বেশ আলোচনা-সমলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ ওইসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে এটি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আবার একটি গ্রুপ রয়েছে যারা কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব রয়েছে। এটি কোনো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেই কাম্য নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে দেশের ৬০ শতাংশ জনবল অর্থাৎ ৩০ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না যায় সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০