নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় সরকারের সুবিধাভোগীদের বিবেচনার বাইরে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সৎ, যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কাছে প্রস্তাব এসেছে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনায়। তারা নতুন ইসিতে নারী, সংখ্যালঘু ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের রাখার পরামর্শও দিয়েছেন।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ে আমন্ত্রিত শিক্ষক, আইনজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ও অধিকার কর্মীদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সার্চ কমিটি। বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা ও ১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে ছিলেন কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
বৈঠক শেষে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি জানতে চেয়েছেন কী প্রক্রিয়ায় নাম বাছাই করা হবে। আমি একটি বিশেষ বিষয় উপস্থাপন করেছি। সেটি হলো, কোনো দলীয় সরকারের সময় এটা বর্তমান সরকার হোক বা আগের দলীয় সরকার হোক বিশেষভাবে সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন কমিশনে স্থান না পায়। এ দাবি আমরা জানিয়েছি এবং অনেকেই তা সমর্থন করেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। তার মধ্যে বেশিরভাগ আমরা বলেছি, যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পাবে তারা যেন আগের কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার মাধ্যমে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে কোনো কোনো সরকার তার বিশ্বস্ত লোকদের সুবিধা দিয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিরা যাতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে স্থান না পান। যাদের সঙ্গে সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক আছে, তারা যেন না আসেন।’
নির্বাচন ব্যবস্থা ‘খুবই সংকটের মধ্যে আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যে কারণে এই অনুসন্ধান কমিটির একটি বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনা। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বের সরকার যাতে আগামীতে কায়েম হয়।’
প্রবীণ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি যাদের মনোনয়ন করবেন তারা যেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয় সংখ্যালঘুরা। এই নির্বাচন কমিশনে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তাদের যাতে প্রতিনিধিত্ব থাকে। আমরা বলেছি, গণমাধ্যম থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে। যারা সিভিল সোসাইটিতে ভালো অধিকার আছে তাদের থেকে প্রতিনিধিত্ব নিতে।’
একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘যাদের নিয়ে কমিশন গঠন করা হবে, তাদের একজনকে নিয়েও যেন কোনো বিতর্ক না থাকে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছি, সব নাম যেন প্রকাশ করা হয়। যত নাম এসেছে তা যেন প্রকাশ করা হয়। জনগণ যাতে দেখতে পারেন।’ সার্চ কমিটিতে কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যদিও বিএনপি ও আরও কিছু রাজনৈতিক দল আসছে না, তারা তাদের সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করতে থাকুক, তাহলেও তো একটা নির্বাচন লাগবে। নির্বাচন কমিশনে যদি ভালো ও সাহসী লোক না যায়… কেবল সরকার পরিবর্তন হলেই হবে না।’
নতুন কমিশনের জন্য সংখ্যালঘুদের থেকে একজন প্রতিনিধিত্ব রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে, রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উনি ১০ জনের বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু সার্চ কমিটির দায়িত্ব সারাদেশের মধ্যে, যে যোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করা।’