সরকার জ্বালানিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প-২০৪১’ অর্জনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে জ্বালানি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে গতকাল দেয়া এক বাণীতে বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২২’ উদযাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বহুমুখী জ্বালানি-সমৃদ্ধ আগামী’ যথাযথ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বিদেশি তেল কোম্পানি শেল ওয়েল থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র-তিতাস, হবিগঞ্জ, রশিদপুর, কৈলাশটিলা ও বাখরাবাদ- কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ইএসএসও ইস্টার্ন ইন.-কে সরকারিকরণ করে জ্বালানি তেলের মজুত, সরবরাহ ও বিতরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। জাতির পিতার এই যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তার গোড়াপত্তন ঘটে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের সময়ে সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ ও জকিগঞ্জ নামে মোট ৫টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার লাইন কিলোমিটার ২-ডি সিইসমিক জরিপ ও ১ হাজার ৫৩৬ বর্গকিলোমিটার ৩-ডি সিইসমিক জরিপ কার্যক্রম চলমান।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত ২১টি অনুসন্ধান, ৫০টি উন্নয়ন ও ৫৬টি ওয়ার্কওভার কূপ খননের ফলে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০০০ এমএমসিএফডি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। আমদানিকৃত এলএনজিসহ বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ৩ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। সারাদেশে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য গ্যাস নেটওয়ার্ক রাজশাহীতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে ও বগুড়া-রংপুর সৈয়দপুর পাইপলাইন নির্মাণ চলমান। আমরা পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন-পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্যাস বিতরণ লাইন স্থাপন ও পায়রা বন্দরে ফ্লটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া ২০৪১ সাল পর্যন্ত গ্যাসের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাতারবাড়িতে দৈনিক ১ হাজার ঘনফুট ক্ষমতার ১টি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কার্যক্রম চলমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জ্বালানি খাতকে আধুনিক ও ডিজিটালাইজড করার জন্য এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং প্রবর্তন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস ও কয়লার উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জ্বালানি চাহিদা পূরণে গ্যাস উত্তোলন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ কয়লার মজুত নির্ধারণ, আহরিত জ্বালানি সম্পদ ব্যবহারের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং এ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, গৃহস্থালি, সিএনজি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বর্ধিত হারে গ্যাস সরবরাহ করার ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধকল্পে আবাসিক গ্রাহকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জ্বালানির অপচয় রোধ করে সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এ দিবসটি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

তিনি ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০