নিজস্ব প্রতিবেদক: আজকে বাস্তবতা হচ্ছে যে, এ সরকার শুধু জনবিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েনি, তারা পুরোপুরিভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে নির্ভর না করে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আরও বলেন, সেজন্য সরকার আজকে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ ও করায়ত্ত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। গতকাল বিকালে উত্তরার নিজ বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের দলের ৯ জন নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। একজনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পাঁচজন এখনও নিখোঁজ আছেন। যারা নিখোঁজ আছেন তারা হলেনÑযুবদল পল্টন থানার যুগ্ম-সম্পাদক লিওন হক, যুবদল তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক মামুন পারভেজ তন্ময়, সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম হাসিব, যুবদল উত্তরা পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস মজুমদার মাসুম ও সদস্য সেলিম মিয়া। যে চারজনকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, মিজানুর রহমান মিজান, রবিউল ইসলাম ও আবুল হাসনাত অনু।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত ১২ নভেম্বর নির্বাচনের দিন হঠাৎ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহনগুলোতে যে অগ্নিসংযোগ
করা হয়েছে এগুলো আগের সেই কৌশল। আমি আগেই বলেছি, সরকার নিজেরাই পরিবহনে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ যে গুমের সংস্কৃতি এটা বাংলাদেশে আগে কখনও ছিল না, মানুষ নামও শোনেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে ক্রমান্বয়ে এটা বাড়তে শুরু করেছে। এ গুমের মধ্য দিয়ে গোটা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক জীবনে একটা ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী গুম হয়েছেন ২০১২ সালে। তিনি আর ফিরে আসেননি। ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনপ্রিয় কমিশনার চৌধুরী আলম, লাকসামের সংসদ সদস্য পারভেজ গুম হয়েছেন আর ফেরেননি। আমাদের ছাত্রনেতা, যুবদল নেতা, স্বেচ্ছাসেবক নেতা সারা দেশে প্রায় ৫০০ গুম হয়ে গেছেন। তাদের হদিস পাওয়া যায়নি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গুম নিয়ে বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। ১০ জন মার্কিন সিনেটর চিঠি দিয়েছেন যে বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। যেটা কল্পনাতীত। গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কেউ চিন্তাও করতে পারে না। আজকে ক্রসফায়ারের নামে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করে সে সব ব্যক্তিদের ন্যূনতম যে মানবিক অধিকার রয়েছে সে অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এটা অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে এসেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সম্পর্কিত বার্ষিক রিপোর্ট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বার্ষিক রিপোর্ট, যুক্তরাজ্যের বার্ষিক রিপোর্টগুলোতে এসেছে। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে যে মানবাধিকারের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে কথা উঠেছে এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, এ কয়েকদিনের মধ্যে যারা গুম হয়েছে তাদের পরিবারসহ আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি। বৃহস্পতিবার দলের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন ও যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমি বিবৃতি দিয়েছি, তারপরও তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের কাছে আহ্বান জানাব যে, কোনো ব্যক্তি যদি নিখোঁজ হয় তার দায়িত্ব হবে সম্পূর্ণ সরকারের। এটা অসম্ভব যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে যাওয়ার পরে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারা তাকে তুলে নিয়ে যাবে। আমরা কোন দেশে বাস করছি? এখানে কি কোনো আইনের শাসন নেই। ১৯৭২ সালের সংবিধানে আমাদের যে গণতন্ত্রের ন্যূনতম অধিকার দিয়েছে সে বিষয়গুলো আমাদের নেতাকর্মী যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের জন্য একেবারে অনুপস্থিত হয়ে গেল?
তিনি অবিলম্বে এসব নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়াসহ সারা দেশের নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।