নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবকিছুকেই একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা তো বলছি না, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান। তবে দেশকে মুক্ত করেন। তারা একটা অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে আপনাকে। চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই দম বন্ধ পরিবেশ থেকে শ্বাস নেয়ার জন্য মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে সবাই মিলে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের সবকিছুতে প্রতারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। অথচ একবারও ভাবে না যে মানুষ বোকা নয়। সবকিছু মানুষ বোঝে। তাদের (সরকার) সমস্যা হচ্ছে তারা একটি গণ্ডির মধ্যে বাস করে। তাকে (প্রধানমন্ত্রী) বোঝাচ্ছে সবকিছু ঠিক আছে। আপনি এত জনপ্রিয়, এত উড়াল সড়ক, ফ্লাইওভার তৈরি করেছেন, এই দেশের মানুষ আপনাকে ছাড়া কিছু বোঝে না। আপনি যা বলবেন তা-ই হবে। এই যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে বারবার।
মার্কেটে আগুন লাগার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার পুরোনো মার্কেটগুলোয় আগুন লাগছে। বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট, এখন কৃষি মার্কেট দেখলাম। এই মার্কেটগুলো এখন আবার নতুন করে তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেগুলো তৈরি করে নিজস্ব লোকদের বরাদ্দ দেয়া হবে। আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করে তাদের মুক্তির দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
২০১৮ সালের নির্বাচনসংক্রান্ত মামলাগুলোর কোনো আদেশ এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট দেননি বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে গোটা ব্যবস্থাটা কী? সেটা হচ্ছে একটা দলকে নির্বাচিত করার সুব্যবস্থাগুলো করে দেয়া, যাতে তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে পারে। এই অবস্থায় সামনে আবার নির্বাচন আসছে। আমরা বলেছি, এই নির্বাচনে তখন যাওয়া সম্ভব হবে যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। কারণ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অধীনে তো কোনোদিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। তারা সব অহংকার ও প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, জনগণ যেন তাদের ভোট দিয়ে সংসদ ও সরকার নির্বাচিত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অন্যথায় বিএনপির ক্ষতি তো হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
জামালপুরের ডিসিকে প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আই ওয়াশ। এছাড়া কিছুই নয়।
ভারতেবিরোধী জোটের ১৪টি মিডিয়া বয়কটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন সেই রকম কিছু করিনি। শুধু বলেছি, দয়া করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করুন। সত্যকে সত্য, কালোকে কালো বলুন। এগুলো না বললে আমার কীভাবে দায়িত্ব পালন করব, একজন সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবে? একইভাবে শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ তার দায়িত্ব পালন করবে, না হলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
সরকার আগের মতো বিএনপির বিরুদ্ধে সমানে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দেয়ার শুরু করেছে বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জামালপুরে গত ৩৬ দিনে ৩০টি গায়েবি মামলা হয়েছে। আপনার দেখেছেন, একসঙ্গে ৭০ জন কোর্টে যাচ্ছে জামিন নিতে। হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার পরে নি¤œ আদালত প্রতি সাত দিন পর পর তারিখ দিচ্ছে, যার ফলে ঢাকা থেকে সাত দিন পর পর জামালপুর গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আজকে এমন কোনো থানা নেই, যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নেই। এটাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলবেন? আমার দুঃখ হয় কিছু উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এটাকে সাপোর্ট করে, কিছু মিডিয়া তাকে সমর্থন দেয়। তাহলে কোথায় গেল আমাদের সেই ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন।
রংপুরে ১৬ সেপ্টেম্বর ও বগুড়ায় ১৭ সেপ্টেম্বর তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচির কথা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আগামী ১৮ তারিখ বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।