মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও সে তুলনায় কমছে না দাম। বর্তমানে আটটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এরই মাধ্যমে দেশে ঢুকছে প্রচুর পরিমাণে আমদানি পেঁয়াজ। তবে পেঁয়াজের যথেষ্ট জোগান থাকলেও ভালো মানের পেঁয়াজের সংকট রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। আর নিম্নমানের পেঁয়াজও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। যদিও আড়তদারদের দাবি, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। চট্টগ্রামে মানভেদে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দরে। অন্যদিকে, খুচরা বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে।
ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর পেঁয়াজের দাম যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেল, তখন ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল ?‘সরবরাহ কম’। এরপর বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলো। তবে তখনও দাম তেমন একটা কমেনি। এখন বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দামও কমে যাওয়ার কথা। পেঁয়াজ মৌসুমের এ সময় দাম কম থাকে। কিন্তু এ বছর এখনও তা দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পেঁয়াজ তার আগের দামে কি আর ফিরবে?
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে মিয়ানমার, চীন, তুরস্ক, মিসর, হল্যান্ড, পাকিস্তান, বেলজিয়াম, উজবেকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এর মধ্যে মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে, চীন থেকে আমদানি করা বড় আকারের সাদা পেঁয়াজ খুবই নি¤œমানের, যা গৃহিণীদের কাছে খুবই অপছন্দ। একই অবস্থা হল্যান্ডের পেঁয়াজেরও।
গতকাল মঙ্গলবার দেশের সব চেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে দেখা যায়, পাইকারিতে মিসরের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬৭ টাকা, চীনের বড় সাধা পেঁয়াজ ৩৮-৪০, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৯৫-১০০, হল্যান্ডের বড় সাদা পেঁয়াজ ৭০, লাল পেঁয়াজ ৯০, তুরস্কের পেঁয়াজ ৭০-৭৫ ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স মিতালি ট্রেডার্সের আড়তদার হারুন-উর রশিদ বলেন, ‘পেঁয়াজ যথেষ্ট আছে। ঘাটতি নেই। মিসর, চীন, তুর্কি থেকে পেঁয়াজ আসছে। তবে ভারতের পেঁয়াজের দাম কম ছিল বলে আমদানি খরচও কম পড়ত।’
আড়তদার মো. জাকারিয়া বলেন, ‘আগে কখনও এত দেশ থেকে পেঁয়াজ আসেনি। খাওয়ার অনুপযোগী ও নি¤œমানের পেঁয়াজ আসছে এখন। অনেক দেশ থেকে পেঁয়াজ এলেও মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পেঁয়াজের চাহিদাই বেশি। এ দুটি দেশের পেঁয়াজের সরবরাহ কিন্তু কম। মিয়ানমারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও এখনও তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। আগে যেখানে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০টি ট্রাক পেঁয়াজ আসত, সেখানে এখন দিনে গড়ে পাঁচ-সাতটি ট্রাক আসছে।
এদিকে, খুচরা বাজারে মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে। এর মধ্যে চীনের বড় সাদা পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, দেশি ছোট লাল পেঁয়াজ ১৩০-১৪০, তুরস্কের ছোট পেঁয়াজ ১০০, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১১০ ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের ঠিক এ সময়ে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০০ শতাংশ ও নতুন পেঁয়াজ ২৩৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের মৌসুমে এ অস্বাভাবিক দামে ভোক্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এখন পেঁয়াজের মৌসুম চলছে। আমদানিও হচ্ছে। তারপরও যদি ২০ থেকে ২৫ টাকার পেঁয়াজ ১২০ টাকায় কিনতে হয়, তাহলে সেটা বড় চিন্তার বিষয়।
আলাপকালে ফারুক নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘অনেক কিছুই তো ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমাদের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নেই, মনিটরিং নেই। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনারও অভাব ছিল। আমদানি নীতিতেও ঝামেলা ছিল। বেশি দামে কিন্তু গিয়ে আমিও ক্ষিপ্ত, ক্ষুব্ধ। এটা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজটা আসার একটু সময় দেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা দেশি পেঁয়াজ পাই। এখনও আমরা সংকটকালে আছি। দেশি পেঁয়াজ আমাদের সাপোর্ট দেবে। আমাদের কৃষকরাও দাম পাবেন। আমদানিকারক বা আড়তদারদের ইনভয়েস দেখে আসলে আমরা কিছু করতে পারি না। তারা আন্ডার ইনভয়েস করে থাকে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম তো ১২০ টাকা হওয়ার কথা নয়। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকতে পারে। সেটা সমস্যা না। বর্তমান দাম যদি সরকার যৌক্তিক মনে করে, তাহলে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করি না। আর দাম অযৌক্তি হলে আমরা নির্দেশনা পেলে অভিযান চালাব।’