নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘বাজারে ইলিশের সরবরাহ অনেক। তবে গত বছর এমন ভরা মৌসুমে যত কম দামে ইলিশ খেয়েছি, এবার সে রকম সস্তা নয়। ওই সময়ের তুলনায় এবার দাম বেশ চড়া। তবে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আবার কম মনে হচ্ছে।’ গতকাল কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে ইলিশ মাছ কিনতে আসা ক্রেতা আবদুস সোবহানের মন্তব্য ছিল এমন।
শুধু সোবহান নয়, বিক্রেতারাও বলছেন এমনটাই। এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে গত বছরে যত সস্তায় ইলিশ মিলেছে, সেই তুলনায় এবার ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম একটু বেশি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারি মাছের আড়তে এখন সারা দিনই ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকারি আড়ত মালিকরাই গত বছরের মতো এবারও দিনভর হাঁকডাকে মুখরিত করে রেখেছেন এ বাজার। অথচ এই মাছের বাজারের আড়তগুলোয় অন্য সময় সকাল ১০টার পরই বেচাকেনার পর্ব শেষ হয়ে যায়।
বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর থেকে ইলিশের এমন অস্থায়ী কেনাবেচা চলছে এ বাজারের আড়তগুলোয়। রাতে যে পরিমাণে ইলিশ আসে, তা সারা দিন কেনাবেচা করে ফুরায় না। ফলে এ বাজারে সারা দিন বিক্রেতারা ইলিশ পাচ্ছেন। গত বছরেও এখানে এমন বাজার বসেছিল।
ওই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে কেজি সাইজের প্রতি হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। আর এর থেকে ছোট (৮০০-৯০০ গ্রাম) সাইজের ইলিশের হালি দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। অনেকে কেজি দরে কিনছেন ৮০০ টাকায়। এছাড়া ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম সেই তুলনায় বেশ কম। এসব কেজি ৫০০ টাকার কিছু কমবেশি।
বিক্রেতা জুলফিকার আলী বলেন, গত বছর এর থেকে আরও কম দাম ছিল। এবার একটু চড়া। তবে সরবরাহ বাড়লে আরও একটু কমতে পারে।
এখন বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী জেলাগুলো থেকে ইলিশের সরবরাহ হচ্ছে বেশি। শুধু কারওয়ান বাজার নয়, যাত্রাবাড়ী, সোয়ারীঘাট, মিরপুর, রামপুরা, বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন মাছের আড়তগুলোয় সরাসরি ইলিশ আসছে।
এনামুল নামে একজন আড়তদার জানান, এবার সমুদ্রের মাছ বেশি। এখনও নদ-নদীগুলোয় ইলিশের আকাল চলছে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে ইলিশ বেশি আসছে। এতে দাম বেশি হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এদিকে মুদি পণ্যেও তেমন দামে হেরফের হয়নি। তবে কোরবানির ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত চালের দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে বাজারে চরম দুর্ভোগে নিম্নও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারেই ভালো মানের মিনিকেট ৫৫ থেকে বেড়ে ৬১, একটু নিম্নমানেরটা ৫২-৫৩ থেকে বেড়ে ৫৯-৬০, আটাশ ৫৫ টাকা, পাইজাম ৪৮ টাকা, ভালো মানের নাজির ৬০ থেকে বেড়ে ৬৪-৬৫, একটু নিম্নমানেরটা ৫৮ থেকে বেড়ে ৬২-৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব চালই খুচরা পর্যায়ে পাইকারি দামের চেয়ে চার-পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
খিলগাঁও বাজারে কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঈদের পর প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। আজ যে দামে পাইকারিতে চাল আনিয়েছি, দুদিন পরে সেই দামে পাওয়া যাবে না। প্রতি মোকামে বস্তায় ৫০-১০০ টাকা বাড়তি পাচ্ছি দাম।’