আয়নাল হোসেন: বাজারে মোটা চালের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গত এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে বাজারে মোটা চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি ছয় থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক থেকে দেড় মাস আগে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। বর্তমানে তা ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ কেজি প্রতি দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ আট টাকা।
বাদামতলী এলাকার নিউ মুক্ত রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ও দেশে কয়েক দফা বন্যার কারণে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ হিসেবে মোটা চাল দেওয়া হয়। নি¤œ ও মধ্যবিত্তসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষই সরু চাল ব্যবহার করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকেই মোটা চাল ব্যবহার শুরু করেন। আর এসব কারণে এ বছর দাম বাড়ছে মোটা চালের।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবমতে, গত এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর একই চাল এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৪ থেকে ৪০ টাকা। এ বছরের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে চাল মজুত রয়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার টন। আর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করা হয় মোট ৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৬ টন। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চালের দাম পড়ছে ৩৮৫ থেকে ৫০৮ মার্কিন ডলার। আর দেশে আমদানির পর দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ৪৮ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত।
মোটা চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন রনি শেয়ার বিজকে বলেন, বছরে সরু বা চিকন চালের দাম তিন দফা বাড়ে। কিন্তু মোটা চালের দাম একবারও বাড়ে না। সরকার ছাড়া মোটা চালের ক্রেতা নেই। দেশে করোনাভাইরাস আক্রমণের কারণে নতুন এক শ্রেণির উদ্যোক্তা ২০-২২ লাখ টন মোটা চাল মজুত রাখেন। মোটা চালের চাহিদা কম থাকায় কৃষকও উৎপাদন কম করেন। ফলে বাজারে এ বছর মোটা চালের সংকট দেখা দেয়।
জাকির হোসেন রনি আরও বলেন, দেশে মোটা চালের সংকট থাকলেও সরু বা অন্যান্য চালের কোনো সংকট নেই। বিগত বছরের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ তিন কোটি ৮৩ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এই অবস্থায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাল আমদানির জন্য সরকারকে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে। দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে, তাতে সরকার চাল আমদানির অনুমোদন বা ট্যাক্স কমানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি মনে করছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম শেয়ার বিজকে বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। কৃষক, মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল মজুত রয়েছে। তবে কেউ যাতে বাজারে অস্বাভাবিক মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কঠোর নজরদারি করছে। তবে মোটা দানের আবাদ কম হওয়ায় এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি বা আমদানিতে ট্যাক্স কমানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া রয়েছে। তবে যেহেতু এই মুহূর্তে দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই, কাজেই এখন আমদানির অনুমোদন কিংবা ট্রাক্স কমানো হচ্ছে না। তবে অবস্থা দেখে সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।