Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:31 am

সরিষায় ভরে গেছে রাজশাহীর মাঠ, দামে খুশি চাষিরা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীর চাষিরা সরিষা আবাদে দিনকে দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবার অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন বাম্পার হয়েছে। রোপা-বোরোর মাঝে বাড়তি ফসল হিসেবে রাজশাহীর চাষিরা গত বছরের তুলনায় বেশি সরিষা চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে যেসব চাষি সরিষা জমি থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করেছেন তারা বলছেন, এবার বাজার দর ভালো। ফসল সংগ্রহের পর ভালো দাম থাকায় খুশি তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে জেলায় সরিষা চাষ ও ফলন দুই-ই বেড়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৪০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা লক্ষ্যমাত্রা চাষের ধরা হয়। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা করেছে চাষিরা। যা ২ হাজার ২৫০ হেক্টর বেশি। সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। হেক্টরে ফলন ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৫৯ টন। (উফশী) জাতের বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭, বারি সরিষা-১৮ চাষের পাশাপাশি বিনা জাতের সরিষা চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, সরিষা, ভুট্টা ও বোরো আবাদের উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সরিষার মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে সরিষার ফলন বেড়েছে।

হাটবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরে একই পরিমাণ সরিষার বাজার দর ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।

জেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, অনুকূল আবহাওয়া ও ভালো মানের বীজ সরবরাহ থাকায় জেলায় সরিষার ফলন বেড়েছে। সরিষার দুটি জাত বারি সরিষা ১৪ ও ১৫ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এই সরিষার মান ও ফলন অনেক ভালো। পাঁচ কেজি বারি সরিষায় তেল হয় পৌনে চার থেকে সাড়ে চার কেজি পর্যন্ত। একই পরিমাণ স্থানীয় জাতের সরিষায় তেল হয় সর্বোচ্চ সোয়া তিন কেজি।

সূত্রটি আরও জানায়, সরিষা চাষে লাভ অনেক বেশি। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষায় সেচ, নিড়ানি, মাড়াই ও বীজ খরচও অনেক কম। রোগবালাইয়েরও তেমন আক্রমণ নেই। সরিষা জমিতে দেয়া টিএসপি সারের ৭৫ ভাগ গ্রহণ করে। বাকিটা জমিতেই থেকে যায়। ফলে সরিষা আবাদের পর জমির উর্বরা শক্তি বেশি থাকায় পরবর্তী ফসল আবাদে চাষ ও সার খরচ অনেক কম লাগে।

তানোরের কৃষক কিসমত আলী বলেন, আউস, আমন ও বোরো চাষের মাঝে সরিষা করলে কোনো সারের দরকার হয় না। সামান্য ইউরিয়া ছাড়া তেমন খরচ নেই। বীজ বোনার দুই মাসের মধ্যে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায়। চারা গজানোর পর আগাছা পরিষ্কার করা ছাড়া তেমন কোনো শ্রমেরও দরকার হয় না। আর সরিষা মেশিন দিয়ে মাড়াই করার কারণে তেমন খরচই নেই। আর কাঁচা বিক্রি করা যায়। টাকা পাওয়া যায় একসঙ্গে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ইউসুফ আলী বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। শুনছি বাজারে ২৮০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে কাঁচা ভেজা অবস্থায়। যদি ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারি তাহলে অনেক ভালো হবে। সরিষা কেটে ধান লাগাব।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, অনুকূল আবহাওয়া ও নিবিড় পরিচর্যার কারণে কৃষকরা সরিষা আবাদ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদও হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে চাষিদের। দুই ধানের মাঝামাঝি সময়ে সরিষা চাষ কিংবা ধান কাটার আগেই ধানের ভেতরে সরিষা বুনে দিয়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষের ব্যাপারেও চাষিদের অবহিত করা হয়েছে। সর্বোপরি বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষকেরা আরও সরিষা চাষে ঝুঁকবেন বলেই মনে হচ্ছে। কম হওয়ায় টরি-৭ জাতের সরিষা চাষে  কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।