সর্বজনীন পেনশন চালুর উদ্যোগ ত্বরান্বিত হোক

‘ষাটোর্ধ্ব সবার পেনশনের ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের পত্রপত্রিকায়, তা স্বাভাবিক কারণেই পাঠকের বিশেষ মনোযোগ কাড়বে।

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। বৃহস্পতিবার গণভবনে অর্থ বিভাগ কর্তৃক ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন’ বিষয়ক একটি উপস্থাপনা অবলোকন করে সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে তা সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে পরিগণিত হবে সাধারণ মানুষের কাছে।

সাধারণত সক্রিয় কর্মজীবন থেকে অবসরের পর মানুষের জন্য যে ভাতার ব্যবস্থা করা হয়, সেটিকে পেনশন বলা হয়। পেনশন ব্যবস্থা নতুন নয়। ব্রিটিশ আমলে এ পদ্ধতি হয়েছে, তা সরকারি কর্মচারীরাই পেয়ে থাকেন। বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ‘বয়স্ক ভাতা’ নামে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে দরিদ্র ব্যক্তিদের এ কার্যক্রমের আওতায় মাসে ৬০০ টাকা ভাতা দেয়া হয়। ২৩টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ১৪৮টি কার্যক্রম নানাভাবে দুস্থ নারী, গর্ভবতী মা, প্রতিবন্ধী, গৃহীন, অতিদরিদ্র, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থসহায়তা করে থাকে। কভিডকালে এ ধরনের সহায়তাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। সামজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে খুবই নগণ্য।

দেশের মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবী এবং দেশে বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। সরকারি কর্মচারীরা দেশের মোট ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের ১ শতাংশ। তাই বলা যায়, ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের বড় অংশই পেনশন সুবিধার বাইরে। শেষ বয়সে তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন। কারও ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে।

দেশের মোট শ্রমশক্তির ৯৫ শতাংশের জন্য সক্রিয় কর্মজীবন শেষে কেন পেনশন ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় তারা আশান্বিত হবেন। পেনশন ব্যবস্থা চালুর জন্য পেনশনারের ব্যক্তিগত অংশগ্রহণও থাকা চাই। টেকসই অর্থনৈতিক নীতি ছাড়া টেকসই ও স্থায়ী পেনশন ব্যবস্থা চালানো সম্ভব নয়। তাই আগে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা শেষে বাস্তবসম্মত জাতীয় পেনশন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কীভাবে সর্বজনীন নাগরিক পেনশন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে, তহবিল কীভাবে সংকুলান করা হবে, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। আংশিকভাবে কিংবা পরীক্ষামূলক না করে প্রথম থেকেই যেন শতভাগ বাস্তবায়ন করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিতে হবে। যেমন একটি একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা ও সর্বজনীন নাগরিক পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা পরামর্শ রয়েছে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে, এমন দেশগুলোর পেনশন আইন ও নীতিমালা, পেনশন তহবিল, পেনশন কর্তৃপক্ষ, এনবিআর ও পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রভৃতি সম্পর্কিত আইন, নীতিমালা ও বিধিও সামনে রাখা যেতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি, উপার্জনহীনতা, বাজারমূল্য বিবেচনায় নাগরিকদের কল্যাণে সরকার সব প্রস্তুতি নিয়েই সর্বজনীন পেনশন চালু করবে বলেই প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০