নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৬ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২৩৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে টেলিকম খাতেই এসেছে সর্বাধিক। এ খাতে ৫৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারের নিট বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে সাড়ে ৩৬ কোটি ও বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ২৭ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। আঙ্কটাডের সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনের উম্মোচনকালে এসব তথ্য জানানো হয়। গতকাল বাংলাদেশে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি সেলের মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। এ সময় নারী উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি সেলিমা আহমাদও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও বিডা সম্মিলিতভাবে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার সুবিধার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও তার প্রতিফলন রাখা হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২০১৫ সালের চেয়ে পরের বছর বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে ২৩৩ কোটি ২৭ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে বলে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের বরাতে সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বাধিক বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০১৬ সালে। এ বছর ৫৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ, বিদ্যুৎ খাতে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ব্যাংক খাতে ১৬ কোটি ডলার, গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামে ১৬ কোটি ডলার, ট্রেডিংয়ে ৯ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। এছাড়া অন্যান্য খাতে প্রায় ৬০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। সম্ভাবনাময় আইটি খাতেও দুই কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। ২০০৯ সালের তুলনায় বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগের হার ২০ শতাংশ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
সভাপতির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার (২০১৭) বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে। আমরা বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেওয়ার ফলে এ বৃদ্ধি ঘটবে। এরই মধ্যে এ বছর ১০ বিলিয়ন (এক হাজার) ডলার বিনিয়োগের চাহিদা পেয়েছি। ভারতে চাহিদার ৩০ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে। আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের ফলে এখানে ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে। ফলে এ বছর পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে থাকবে। আমরা ব্যবসার পরিবেশসংক্রান্ত ডুইং বিজনেস ইনডেক্সে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম একশোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
সর্বাধিক বিনিয়োগ টেলিকম খাতে হলেও এ খাত সম্পর্কে বক্তারা বলেন, এ খাতে অসমতা আছে। আইটি বা সফটওয়্যার খাত আর টেলিকম খাতকে একই রকমের নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে আইটি খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আর টেলিকম খাতের গ্রামীণফোন-বাংলালিংকের মতো কোম্পানিগুলো সমান হারে ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা দরকার বলে বক্তারা অভিমত দেন। এজন্য টেলিকম ও সফটওয়্যার খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলাদা আইন করার পরামর্শ দেন নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ।
Add Comment