সর্বোচ্চ মুনাফা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সুনামের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাজার মূলধন ও সূচকের প্রতিনিয়ত রেকর্ড হচ্ছে। পুঁজিবাজার জিডিপিতে অবদান রাখছে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ মুনাফা দেয়।

গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ‘ইনভেস্টর সামিট : বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শিরোনামে ‘রোড শো’তে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আরিফ খান বলেন, অর্থনীতির দিক দিয়ে পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

এ দিকে বাংলাদেশ প্রচুর জনসংখ্যার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সক্ষম হয়েছে। ভারত ও চীনের মতো বাংলাদেশে বিনিয়োগের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আগামী এক দশকে ভারতের চেয়ে অনেক গুণ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল ছিল ৯৮ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে তিন শতাংশে। এখানে প্রচুর শ্রমিক রয়েছে; তাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ মহিলা। শিক্ষার হার ১৯৮৮ সালে ছিল ২৮ শতাংশ, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশে। বাংলাদেশ রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিশে^র মধ্যে অষ্টম। এছাড়া বিদেশি রিজার্ভের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা অনেক গর্বের সাথে বলতে পারি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমাদের দেশ। এছাড়া পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বাসস্থান শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হচ্ছে এখন। আমাদের দেশের মানুষের অধিকাংশ প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখ করে আরিফ খান বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা দুই হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

আরিফ খান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। কোভিডকালেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে কোভিডের মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি সাত কোটি। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি বয়সে তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়া ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রয়েছে। এদিকে ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ মূল্য ধারাবাহিক কমে গেছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মোট তিন শতাংশ, যা আমরা টার্গেট নিয়েছি চার শতাংশে নিয়ে যাওয়ার। এছাড়া পুঁজিবাজারের ভালো কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের এখন অনেক বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে। যার ফল পুঁজিবাজারে ইতোমধ্যেই দেখা গেছে। হংকংয়ের ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এশিয়ার মধ্যে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। এদিকে বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ বিলিয়ন ডলারে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিন দিন বাড়ছে।

এবারের রোড শো’তে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন ছাড়াও বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও মো. মাহবুবুল আলম, পরিচালক মাহমুদুল হক ও উপপরিচালক মোহাম্মদ রাশিদুল আলম।

উল্লেখ্য, আরিফ খান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি এবি ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০