## ভ্যাট মেলা-ভ্যাট বুথ স্থাপনের ফলে রিটার্ন বেড়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাটের
## রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধিতে টানা পঞ্চমবার শীর্ষে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট
## রিটার্ন জমার সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট
নিজস্ব প্রতিবেদক: অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিলের হার প্রতিমাসেই বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর তদারকি বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধন-রিটার্ন বেড়েই চলেছে। নিবন্ধন আর রিটার্ন দাখিল বাড়াতে কমিশনারেটগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। প্রতিনিয়ত নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন পদক্ষেপ। যার মধ্যে রয়েছে-ভ্যাট মেলা, মার্কেটে মার্কেটে ভ্যাট বুথ স্থাপন, করদাতাদের এসএমএস প্রদান, প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের সশরীরে গমন, শীর্ষ করদাতাদের পুরস্কার প্রদান প্রভূতি।

যার ফলে প্রতিমাসে কমিশনারেটগুলোতে অনলাইনে রিটার্নের সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধি নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। ডিসেম্বর মাসে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধিতে ১২টি কমিশনারেটের মধ্যে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট প্রথম। পঞ্চমবারের মতো এ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। আর রিটার্ন জমার সংখ্যার দিক থেকে ‘শীর্ষস্থানে’ রয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। অনলাইন রিটার্ন জমার সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট।

এনবিআরের হিসাবে, ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধিত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার ৮৮০টি। এরমধ্যে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৯০ হাজার ৩৮২টি (ডিসেম্বর মাসের রিটার্ন)। নিবন্ধনের তুলনায় ডিসেম্বরে মাসে রিটার্ন দাখিলের হার প্রায় ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে জানুয়ারি মাসে (ডিসেম্বরের ভ্যাট রিটার্ন) জমা পড়েছে সর্বোচ্চ ভ্যাট রিটার্ন। এনবিআরের অধীন ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটে ডিসেম্বর মাসে অনলাইনে দাখিলকৃত মোট রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৮৯ হাজার ৬২৮টি। যার মধ্যে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়েছে ১৬ হাজার ২৭৫টি। সারা দেশের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।’

তিনি বলেন, ‘এই কমিশনারেটে মোট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৪২৭টি। অনলাইনে দাখিলকৃত রিটার্নের হার ছিল মোট নিবন্ধনের ৬০ শতাংশ। ভ্যাট মেলা ও ভ্যাট বুথ স্থাপনের ফলে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা গত কর মেয়াদের তুলনায় ৩ হাজার বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক পরিমাণে রিটার্ন জমার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের ডিসেম্বরে আদায় হয়েছে ৬৯৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের ডিসেম্বরের তুলনায় এ অর্থবছরের ডিসেম্বরে ১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।’
কমিশনার বলেন, ‘ভ্যাট মেলা ও ভ্যাট বুথ স্থাপনের ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যেন ভবিষ্যতেও অনলাইনের মাধ্যেমে নির্বিঘ্নে ভ্যাট দিতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ভ্যাট বুথ ও ভ্যাট মেলার আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’

এনবিআরের হিসাব মতে, ডিসেম্বর মাসে রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধিতে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট প্রথম অবস্থানে থাকলেও রিটার্ন দাখিল সংখ্যায় রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এ কমিশনারেটের রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৯৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬১২। এরমধ্যে ডিসেম্বর মাসে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৯ হাজার ১০৩টি। আর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যায় ১২টি কমিশনারেটের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ২৭ হাজার ৪৬২টি। এরমধ্যে ডিসেম্বর মাসে মোট রিটার্ন দাখিল হয়েছে ১৬ হাজার ৪১৬টি।

অপরদিকে অনলাইন রিটার্ন জমার সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ১৩ হাজার ৮০৫। এরমধ্যে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ১৩ হাজার ৩২টি; রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৯৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। রিটার্ন দাখিল সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধিতে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১০ হাজার ১১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৮ হাজার ৪৫২টি। রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রিটার্ন দাখিল সংখ্যা ও প্রবৃদ্ধিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৯ হাজার ৩৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৭ হাজার ৩৭৯টি। রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৭৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

রিটার্ন দাখিল সংখ্যায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ২৬ হাজার ৪৬৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৭ হাজার ৮০টি, প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১৪ হাজার ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ৪৬৩টি, প্রবৃদ্ধি ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অষ্টম অবস্থানে রয়েছে খুলনা ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১৫ হাজার ৪৬০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬ হাজার ৪৬২টি রিটার্ন দাখিল করেছে; প্রবৃদ্ধি ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

নবম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৫৬ হাজার ৩২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৬ হাজার ৪৪০টি; রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দশম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ১৫ হাজার ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৫ হাজার ২৭৫টি; রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৩৪ শতাংশ।

একাদশ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট। এ কমিশনারেটে নিবন্ধিত ৩২ হাজার ৪০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৪ হাজার ১৮৪টি; প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ। দ্বাদশ অবস্থানে এলটিইউ। এলটিইউতে নিবন্ধিত ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছে ৯৭টি, প্রবৃদ্ধি ৬৮ দশমিক ৩১ শতাংশ।