মো. আসাদুজ্জামান নূর: সূচক এক দিন বাড়ে তো আরেক দিন কমে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ বৃত্তে থাকা পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শুরুটা হলো হতাশা দিয়ে। গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হ্রাস পেয়েছে ১১ পয়েন্ট। তবে সামান্য বেড়েছে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ থেকে আবার তা ১০ শতাংশ করা হচ্ছেÑএমন খবরে গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সূচকের ব্যাপক পতন হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি থেকে জানানো হয়, এমন কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার পরে সোমবার শেষবেলায় দরপতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় পুঁজিবাজার। মঙ্গলবার হয় বড় উত্থান। এরপর বুধবার আবার দরপতন হয়, বৃহস্পতিবার একেবারে শেষ বেলায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ হয়।
নতুন সপ্তাহের প্রথম দিনের শুরুটা সূচক বেড়েই শুরু হয়েছিল। এরপর কয়েক ঘণ্টায় দেখা যায় উত্থান-পতন। বেলা ১টার পর দেড় ঘণ্টায় সূচক পড়ে যায় আবার। ৫০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত। এতে বোঝা যায় দুই শতাংশের সীমা না থাকলে দরপতন আরও বেশি থাকতে পারত।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পতনের পেছনে তিনটি বিষয় কাজ করেছে। দিনটিতে বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতন, লেনদেনে গতিহীনতা, পতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে বিপুলসংখ্যক শেয়ারের লেনদেন হওয়া পতন ডেকে এনেছে। দিন শেষে ১১৭টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে হারায় ২১৯টি কোম্পানি। দর ধরে রাখতে পেরেছে ৪২টি।
এর প্রভাবে ডিএসইএক্স ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৪১ পয়েন্টে। কমেছে ব্ল–-চিপ সূচকও। ৩ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ডিএস৩০ অবস্থান করছে দুই হাজার ৪৬২ পয়েন্টে।
অন্যদিকে শরিয়াহ্র ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসইএস মাত্র ১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৫৮ পয়েন্টে। সূচকের পতন ত্বরান্বিত করেছে বেক্সিমকো, আইসিবি, লাফার্জহোলসিম, রেনাটা ও বেক্সিমকো ফার্মার মতো কোম্পানিগুলোর দরপতন।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে সবগুলোই বেশিরভাগ শেয়ারদর হারিয়েছে। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে উৎপাদন শুরুর মতো সুখকর তথ্যেও কেপিসিএলের শেয়ার একপর্যায়ে দর হারিয়ে ফেলে। বৃহস্পতিবার ৩৫ টাকা দরে শেয়ার বিক্রিতে বিনিয়োগকারীরা রাজি না থাকলেও সেই কোম্পানির শেয়ার একপর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অবশ্য শুরুতে এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা ৩০ পয়সায়।
কেবল একটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করতে পেরেছে। সেটি হলো লিবরা ইনফিউশন। তবে এর চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে বিমা খাতের বিএনআইসিএল। তবে এটি যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল। এই দুটি কোম্পানি ছাড়া শীর্ষ দশে পাঁচ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির, আর চার শতাংশের বেশি দর বেড়েছে পাঁচটির।
শীর্ষ দশের বাইরে আটটি কোম্পানির দর তিন শতাংশের বেশি, আর ১০টি কোম্পানির দর দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে। পুঁজিবাজারে সাধারণত সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির শেয়ার এর চেয়ে বেশি হারে বাড়তে দেখা যায়।
সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ছয় শতাংশের বেশি দর হারানোর কারণ এর লভ্যাংশ-সংক্রান্ত ঘোষণা। কোম্পানিটির শেয়ারদর পাঁচ টাকার কম হওয়ায় গত কয়েক দিনে শেয়ারদর কমার সুযোগ ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে কারণে রোববার এর কোনো মূল্যসীমা ছিল না। বৃহস্পতিবার শেয়ারদর ছিল চার টাকা ৯০ পয়সা। সেটি কমে হয়েছে চার টাকা ৬০ পয়সা। কমেছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। একপর্যায়ে দর কমেছিল ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ৮২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দরপতনের ভেতরেও আগের কার্যদিবসের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে। রোববার হাতবদল হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে এটি ছিল ৮২৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল বিবিধ খাতের দখলে। ১২ দশমিক ৭ শতাংশ লেনদেনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। পরের অবস্থানে থাকা আইটি খাতে লেনদেন হয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া ট্যানারি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বস্ত্র ৯ দশমিক ৪, প্রকৌশল ৮ দশমিক ৪, ব্যাংক ৭ দশমিক ৬ ও খাদ্য খাতে ৭ দশমিক ১ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। আর কোনো খাতের লেনদেন পাঁচ শতাংশ ছুঁতে পারেনি।