সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করে গড়ে তুলতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে গুরুত্ব দিয়ে আরও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল যশোরে বিমানবাহিনী একাডেমিতে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ কথা জানান। বিমানবাহিনীর ক্যাডেটদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর সরকার গঠন করি। ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বিমানবাহিনীর উন্নতির পদক্ষেপ নেয়। ’৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে তৎকালীন সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ কিনি। বিমানবাহিনীসহ সব বাহিনীকে আধুনিক করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। যুদ্ধ বিমানসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এখন বিমানবাহিনী অনেক বেশি দক্ষ ও চৌকস। ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করতে পারে।’

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনে করিয়ে দিয়ে তিনি ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, ‘সৈনিক জীবন অত্যন্ত কঠিন জীবন, তবে পথ হারানো যাবে না। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন, অধস্তনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। সততা, একাগ্রতা, দেশপ্রেম নিয়ে, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কাজ করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

১০৪ জন অফিসার ক্যাডেট এদিন কমিশন লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশমাতৃকার প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য বিমানবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনারা শপথ গ্রহণ করেছেন। কাজেই এটা হবে আপনাদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ও প্রথম ব্রত। নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকবেন এবং দেশের সেবা করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।’

উন্নত চরিত্র এবং মানসিক শক্তি একজন বিমান সৈনিককে আদর্শ সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখবেন, অধস্তনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। তাহলেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, অকৃত্রিম দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার যে শপথ আজ আপনারা নিলেনÑতার বাস্তবায়ন আপনারা সবসময় করে যাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জাতির জনক একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমানবাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির জনকের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয় সে সময়কার অত্যাধুনিক

‘মিগ-২১’ সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিমানবাহিনীকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিংয়ের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। দেশের এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী নিজস্ব জনবল, প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ব্যবহার করে ফাইটার বিমানের ওভারহলিং করতে সক্ষম।

আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় বিমানবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাদির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল ককপিট সংবলিত কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান এবং পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানসহ হেলিকপ্টার সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে।

দেশের আর্থসামাজিব উন্নয়নের তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে আজ আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে জাতির জনক যেখানে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তারই আদর্শের পথ ধরে আমরা বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে পেরেছি। কেননা, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নীতিমালা গ্রহণ করে তার ভিত্তিতেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ক্যাডেটদের মাঝে ফ্লাইং ব্যাজ, বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ট্রফি এবং সম্মানসূচক তরবারি প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী ৭৬তম বাফা কোর্সে সার্বিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জনকারি সার্জেন্ট মাহিম সালিককে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০