সহগ জটিলতায় রপ্তানি খাত স্পেশালিস্ট চায় ডেডো

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনার ধাক্কা কাটিয়ে পোশাক খাত যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্ত শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ অধিদপ্তর (ডেডো) নতুন সহগ ইস্যু ও পুরান সহগ নবায়ন না করায় ঢাকা বন্ড কমিশনারেট ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন বা কাঁচামাল ব্যবহারের অনুমতি) দিচ্ছে না। এতে বেকায়দায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। সমস্যা সমাধানে টেক্সটাইল খাতের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে ডেডো থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি ডেডোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তাসমিনা হোসেন সই করা চিঠি দেওয়া হয়।

সহগ হচ্ছে-পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল পরিমাপের একক। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনে কী পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন তা নির্ণয় পদ্ধতিকে সহগ বলা হয়। ডেডো বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় রপ্তানি পণ্যের সহগ ও সমহার ইস্যু করে থাকে। সমহার হচ্ছেÑরপ্তানিকৃত পণ্যের শুল্ক ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি।  

রপ্তানিকারকরা জানান, ডেডো সহগ ইস্যু বা নবায়ন না করায় তারা নতুন জটিলতায় পড়ছেন। কারণ ঢাকা বন্ড কমিশনারেট সহগ ছাড়া ইউপি ইস্যু করছে না। আর ইউপি ছাড়া কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করলেও জরিমানা আরোপ করে বন্ড কমিশনারেট। ক্ষেত্রবিশেষে এটিকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তা নিষ্পত্তি করতে বেগ পোহাতে হয়।

এমনও নজির আছে, দ্রুত অর্ডার সরবরাহের তাড়া থাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান ইউপি না নিয়ে পণ্য রপ্তানি করেও এখন বন্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে। সংশিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন), পিআরসি (রপ্তানির অর্থ প্রত্যাবাসন সনদ) থাকার পরও বন্ড কাঁচামাল অপসারণের দায়ে সুদসহ আমাদানি শুল্ক দাবি করে  কারণ দর্শানো নোটিস জারি করেছে। ওইসব বিষয় এখনও নিষ্পত্তি করতে পারছে না তারা। এ কারণে রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।

টেক্সটাইল খাতের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে এনবিআরে চিঠি দিয়েছে ডেডো। এতে বলা হয়েছে, ডেডোতে বর্তমানে দুজন সেক্টর স্পেশালিস্ট আছে। এর মধ্যে একজন ইলেকট্রিক্যাল ও একজন কেমিক্যাল স্পেশালিস্ট। টেক্সটাইল খাতে স্পেশালিস্ট নেই। ২০১৬ সালে ২৭ মে থেকে পদটি শূন্য আছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই তিন সেক্টরের বাইরে লেদার গুডস, লেদার প্রসেসিং, সিরামিক, সিভিল ইঞ্জিরিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটালর্জি ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড প্রসেসিং সেক্টরের সহগ জারি করা প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেক্টরগুলোতে স্পেশালিস্ট না থাকায় বর্তমানে কর্মরত দুজন স্পেশালিস্ট ও একজন কস্ট একাউন্ট্যান্টের সমন্বয়ে স্টেকহোল্ডারদের আবেদন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠান জরিপ করে জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে সহগ নির্ধারণ করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে সহগ প্রস্তুতের জন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান যেমন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইনস্টিটিউট অভ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সহায়তা নেওয়া হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ডেডোতে কর্মরত সেক্টর স্পেশালিস্ট দুজনের স্ব স্ব সেক্টরের বাইরে অন্য সেক্টরের সহগ নির্ধারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ডেডোতে আবেদনকৃত সহগের সিংহভাগ টেক্সটাইল সেক্টরের এবং সহগ নির্ধারণ কার্যক্রম রাজস্ব সংশ্লিষ্ট থাকায় সেক্টর স্পেশালিস্ট থাকা অতীব জরুরি। এ অবস্থায় টেক্সটাইল সেক্টরের স্পেশালিস্ট নিয়োগসহ অন্য সেক্টরের স্পেশালিস্ট পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রপ্তানিকারকরা বলছেন, ডেডোতে সেক্টর স্পেশালিস্ট না থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক খাত, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এখন ডেডোতে সহগ নবায়ন করতে গেলে বুটেক্সের সুপারিশ আনতে বলা হচ্ছে। বুটেক্সে চিঠি দিলে কবে সুপারিশ পাওয়া যাবে তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে রপ্তানিকারকদের ইউপি নিতে হয়। আবার ইউপি ছাড়া রপ্তানি করলেও জরিমানাসহ বন্ড লাইসেন্স নবায়নে ঝামেলা পোহাতে হয়। এভাবে একটার পর একটা ঝামেলা তৈরি হলে ব্যবসা আগাবে কীভাবে?

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০