সহজ শর্তে ঋণ অব্যাহত রাখতে উন্নয়ন অংশীদারদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যে অর্থনৈতিক মন্দা দশা তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ অব্যাহত রাখতে উন্নয়ন সংস্থা ও উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত সহজ শর্তে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং উন্নত দেশগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে, আমরা তাদের নজর চাই।’

বাংলাদেশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সরকার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক যৌথভাবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ অনুষ্ঠানের আায়োজন করে। সূত্র: বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও কাছে করুণা বা দয়া চাই না, আমরা ন্যায্য অধিকার চাই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যাই দাবি করছি।’

ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সংকটময় সন্ধিক্ষণে আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, অনেক উন্নয়ন অংশীদার

সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা বেশিরভাগ প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন-অর্থায়নকে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর করে তুলছে। তাই একাধিক অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।’

বৈশ্বিক ব্যবসায়িক অংশীদাররা ‘অপ্রয়োজনীয়’ বাণিজ্য বিধি-নিষেধ আরোপ করছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমি দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, আইসিটি-ভিত্তিক উদ্যোক্তা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর কৌশলগত গুরুত্বারোপসহ অর্থায়নের নমনীয় পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জন্য এডিবির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, বেশিরভাগ দেশই খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিকভাবে মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ধস ও মূল্যস্ফীতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব বিষয় বিশ্ব সম্প্রদায়ের দরিদ্রতম অংশকে অন্যায্যভাবে প্রভাবিত করছে।

এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং। বাংলাদেশ-এডিবি সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হয়েছে এবং ৫০ বছরে ও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে. তার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় অনুষ্ঠানে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় এডিবি ২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। আমি এই সহায়তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। সম্প্রতি এডিবি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রলংকরী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের জরুরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এছাড়া এডিবি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে স্বল্প-সুদে অর্থায়ন করছে। আমরা অত্যন্ত সন্তেুাষের সঙ্গে লক্ষ করছি, দুঃসময়ে এডিবি উদ্ভাবনী অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সব সময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে।’

এডিবির সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই প্রথম এডিবির সাথে আমাদের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ৫০ বছরে আমাদের আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রায় সব খাতে তাদের সহায়তা রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এডিবিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবির সহায়তা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এডিবির সহযোগিতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এডিবির ক্রমবর্ধমান অবদান দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এডিবির পোর্টফোলিওতে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় বৃহত্তম গ্রাহক। আমরা বর্তমানে এডিবির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় ৫৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার (সাসেক) অধীন এডিবি-অর্থায়নকৃত আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সংযোগ প্রকল্পগুলো অশুল্ক বাধা হ্রাস করে পণ্য ও পরিষেবায় আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

গত দেড় দশকে বাংলাদেশ উন্নয়নের অভাবনীয় যাত্রার সাক্ষী হয়েছে বলে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা এই সময় ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, সাক্ষরতার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং লিঙ্গসমতা অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা কভিড-১৯ মহামারিকেও সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। আমাদের এই উন্নয়ন প্রচেষ্টা বিশ্ব সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত। আগামী বছরের মধ্যে আমরা দেড় ট্রিলিয়ন অর্থনীতির মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছি। বর্তমান জিডিপির আকারে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ধারাবাহিকভাবে এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে ২৮ এবং ২০৩৬ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা দেখাতে পেরেছে। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল আমাদের জন্য গৌরব, মর্যাদা ও যোগ্যতার প্রতীক, যা বাংলাদেশ পারে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০