নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিদেশি দূতাবাস, মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভ্যাট প্রত্যর্পণ বা দাবি নিষ্পত্তি আরও সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করেছে শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের (ডেডো)। সম্প্রতি দূতাবাস, মিশন ও সংস্থার ফেরত দাবির আবেদনে বিচ্যুতি, তথ্য ঘাটতিসহ অসংগতি ডেডোর নজরে আসে। ফলে সম্প্রতি এই আদেশ জারি করা হয়েছে। এই আদেশের ফলে দাবি নিষ্পত্তি আরও সহজ ও দ্রুত হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশি সংস্থা আর দূতাবাসের দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তিতে ডেডো ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়েছে, যা ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্রাশ প্রোগ্রামে ২১ দিনে ২৫ হাজার দাবি নিষ্পত্তি হয় করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ১০০ টাকার নিচে ভ্যাট ফেরতের (প্রত্যর্পণ) জন্য আবেদন করা যাবে না। এছাড়া মিশন ও সংস্থায় কর্মরতদের ব্যক্তিগত কেনাকাটার ভ্যাট ফেরত আবেদন করা যাবে না। এছাড়া মূসক চালান ইস্যু বা কর পরিশোধের ছয় মাসের মধ্যে ফেরত আবেদন করতে হবে। সম্প্রতি ডেডোর আদেশে ‘কূটনৈতিক মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি ফেরত’ বিষয়ে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার পাশাপাশি বিদেশি সংস্থার ভ্যাট বা মূসক ফেরত দাবি আইনানুগ, দ্রুত ও সহজে নিষ্পত্তিতে এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ডেডোর সূত্রমতে, রপ্তানি খাতকে উৎসাহ দিতে ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ডেডো প্রতিষ্ঠিত হয়। ডেডোর কাজের ধরন এনবিআরের অন্য সংস্থার মতো নয়। শুল্ক প্রত্যর্পণ, রপ্তানি সহগ নির্ধারণ, রিফান্ড, প্রকৃত ও সমহার নির্ধারণ, প্রত্যর্পণ আবেদন ও মামলা নিষ্পত্তি, ভুল সংশোধন ও সমন্বয়, প্রার্থীর চেক ইস্যু, প্রশাসনিক কাজ প্রভৃতি করে ডেডো। ডেডো ৪৮টি বিদেশি সংস্থা ও দূতাবাস নিয়ে কাজ করে।
আদেশে বলা হয়েছে, মূসক প্রত্যপর্ণের আবেদনের ক্ষেত্রে আটটি শর্ত মানতে হবে। প্রত্যর্পণ আবেদনে মিশন বা সংস্থাপ্রধান বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি সই করবেন। সই ও ছাপমোহরসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির নাম, পদবি ও নমুনা সইয়ের লিখিত প্রত্যয়ন আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। আবেদন মূসক ১০.১ ফরমে প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয়ের জন্য দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে মূসক-৬.৩ ও যথাযথ প্রমাণক দিতে হবে। আবেদনে মিশন বা সংস্থার ডেডিকেটেড ব্যাংক হিসাব ও টেলিফোন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। ব্যক্তিগত কেনাকাটার ফেরত আবেদন করা যাবে না। অসম্পূর্ণ আবেদন ফেরত ও অগ্রহণযোগ্য হবে।
প্রত্যর্পণের ৯টি শর্ত ও সীমা আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১০০ টাকার নিচে পণ্য, সেবা ও গ্যাসোলিনের আবেদন দাখিল করা যাবে না। অফিশিয়াল কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রত্যয়নপত্র যুক্ত করতে হবে। পণ্য, সেবা, গ্যাসোলিন ও সমজাতীয় পণ্য ভ্যাট নিবন্ধনধারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনতে হবে। গ্যাসোলিনের ক্ষেত্রে অ্যানেক্সার ১, পণ্যের ক্ষেত্রে অ্যানেক্সার ২ ও সেবার ক্ষেত্রে অ্যানেক্সার ৩ অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। মূসক চালান-৬.৩ ইস্যু অথবা কর পরিশোধের তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক ইউটিলিটির ক্ষেত্রে ফেরত আবেদন অগ্রহণযোগ্য হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংস্থার প্রতিনিধি ডেডোর সংশ্লিষ্ট শাখায় পরিপালন চেকলিস্ট পূরণ ও সই করে জমা দিতে হবে। সইকারী প্রতিনিধি অন্যত্র বদলি হলে তার ঊর্ধ্বতন সংস্থা বা ইউনিটপ্রধান তার পরিচিতি প্রত্যয়ন করবেন। ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরিবর্তন করা হলে কূটনৈতিক মিশন ও সংস্থার প্রধান অথবা ডেডোকে লিখিতভাবে অবহিত করবে। মিশন বা সংস্থার জরুরি ও তাৎক্ষণিক কোনো বিষয় থাকলে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক ফর ফরেন মিশন (আইডিএফএম)’ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ বা সহকারী পরিচালককে টেলিফোনে বা মৌখিকভাবে অবহিত করতে হবে।
অন্যদিকে ফেরত আবেদনের সঙ্গে আটটি প্রমাণক দাখিল করতে পারে। এর মধ্যে পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে পাঁচটি ও গ্যাসোলিনের ক্ষেত্রে তিনটি প্রমাণক আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে। পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে হলোÑআবেদনের সঙ্গে মূসক-৬.৩ চালানের বিপরীতে টিআর চালানের মূল কপি অথবা সংশ্লিষ্ট সার্কেল কর্মকর্তার সত্যায়িত কপি যুক্ত থাকতে হবে। আবেদনকারী সংস্থার নাম ট্রেজারি চালানে থাকতে হবে। চালানে মূসক-৬.৩ চালানের ক্রমিক নম্বর ও তারিখ উল্লেখ থাকতে হবে। একাধিক মূসক-৬.৩ চালান থাকলে ট্রেজারি চালানে সুনির্দিষ্ট ব্রেকডাউন থাকতে হবে। অ্যানেক্সারের সঙ্গে দাখিল করা ফেরত দাবি ভাউচারে সংশ্লিষ্ট মিশন ও সংস্থার প্রতিষ্ঠান প্রধান অথবা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির সই ও নামসহ ছাপমোহর থাকতে হবে। গ্যাসোলিনের ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত হলোÑপ্রতিষ্ঠানপ্রধানের নাম ও ছাপমোহরসহ তাদের ব্যবহƒত গাড়ির তালিকা প্রত্যয়ন করে ডেডোতে পাঠাতে হবে। পরিবর্তন পরিবর্ধন করার সময় ডেডোকে অবহিত করতে হবে। বিক্রয় রশিদ, বিল ভাউচার, রিফান্ড দাবি ভাউচার বা সংশ্লিষ্ট কাগজে গাড়ি নম্বর উল্লেখপূর্বক বিক্রেতা ও ক্রেতার সই, নামসহ ছাপমোহর থাকতে হবে।
অপরদিকে ফেরত দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ডেডোর কর্মকর্তাদের আটটি আদেশ মানতে হবে। মিশন বা সংস্থার সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চারটি আদেশ মানতে হবে। এছাড়া চেক ইস্যুর ক্ষেত্রে পাঁচটি, সাক্ষাতের ক্ষেত্রে চারটি নিয়ম মানতে হবে। অনিষ্পন্ন ও তর্কিত আবেদন নিষ্পত্তির জন্য ডেডোর মহাপরিচালক বা যুগ্ম পরিচালকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে তা নিষ্পত্তি করা হবে।
ডেডো সূত্রমতে, আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তিসহ ডেডোর সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য ডেডো পে নামে অ্যাপ চালু করা হয়েছে। তবে এই অ্যাপ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। সেজন্য ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ফেরত দাবি নিষ্পত্তি করা হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। এছাড়া অ্যাপসের ক্ষেত্রে আরও চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অ্যাপস চালুর পর সব সংস্থার আবেদন অনলাইনে গৃহীত হবে এবং এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার আলোকে নথি নিষ্পত্তি করা হবে। ফেরতের পরিসংখ্যান, দাবি নিষ্পত্তি, সংস্থা অনুযায়ী রিপোর্টিং এমআইএস রিপোর্ট ব্যবহারকারীর কর্মক্ষমতা রিপোর্ট প্রভৃতি ডেডো পে অ্যাপস থেকে তৈরি করা হবে। ব্যবহারকারী মোবাইল অ্যাপস এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে এবং অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনের স্থিতি ট্র্যাক করতে সক্ষম হবে। অ্যাপে একাধিক ফেরত প্রদান, প্রতারণামূলক দাবি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধ নিশ্চিত করবে। এ অ্যাপ চালু হলে ডেডোর কাজ দ্রুত এবং সহজ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।