সহনীয়ভাবে বাড়ানো হোক গ্যাসের দাম

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক আগামী মার্চ ও জুনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এরই মধ্যে শেয়ার বিজসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যমগুলোয় আলোচিত এবং সমালোচিত। কারণটিকে অসংগত বলা যাবে না। কেননা গ্যাস কেনায় ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তি তুলে ধরে বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বিদ্যুতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ছে ৩৪ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১ টাকা ২৬ পয়সা, সারে ১৩ পয়সা, শিল্পে ১ টাকা ২ পয়সা, চা-বাগানে ৯৭ পয়সা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৫ টাকা ৬৮ পয়সা, সিএনজি ফিড গ্যাসে ৫ টাকা ও আবাসিকে ৪ টাকা ২০ পয়সা। আমাদের প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যানুসারে, তাতে করে মিটারবিহীন আবাসিকে বার্ষিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, মিটারভিত্তিক আবাসিকে ৭১৩ কোটি, সিএনজিতে ৬৬৯ কোটি, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে ৫৭৯ কোটি, শিল্পে ৪৫২ কোটি, বিদ্যুৎ খাতে ৪২৫ কোটি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ১৫৩ কোটি এবং সার ও চা-বাগানে ২২ কোটি টাকা। এখন বিশ্লেষণে যদি কেউ অন্ধ না হন, তার অবশ্যই দেখতে পাওয়ার কথা, আসন্ন গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সর্বপ্রথম বিপাকে পড়তে যাচ্ছে সাধারণ মানুষÑপ্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। চলতি প্রস্তাবটির বাস্তবায়ন হলে প্রত্যক্ষভাবে তাদের বিপুল বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে মিটারবিহীন ও মিটারযুক্ত আবাসিকে। উপরন্তু তাদের ওপর পরোক্ষ ব্যয়ের বোঝা বাড়বে। কেননা দাম বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানেই রয়েছে সিএনজি ফিড গ্যাসের দাম। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমাদের না ভাবিয়ে পারে না।

এখানে কয়েকটি বিষয় সূক্ষ্মভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন অবশ্য। প্রথমত রাজস্বে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে গ্যাসের দাম বাড়ানো দরকার। এ কথা আমরা অস্বীকার করছি না। দ্বিতীয়ত দেশে গ্যাসের চাহিদা আগামীতে আরও বাড়বে বৈ কমবে না। সেক্ষেত্রে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজি আমদানির চিন্তাও নীতিনির্ধারকরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানা যায়। সুতরাং স্থানীয় পর্যায়ের গ্যাসের দাম প্রাক্কলিত আমদানিকৃত এলএনজি’র স্তরে নিয়ে যাওয়া দরকার। তৃতীয়ত শিল্প খাতের গ্যাসের সঙ্গে আবাসিকের গ্যাস তুলনীয় নয়। কেননা শিল্প খাতে গ্যাসের অপব্যবহার কম। তাছাড়া শিল্প খাতে গ্যাসের দাম কম থাকলে তা বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক। ফলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোরতর বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। কিন্তু কথা হলো, ভোক্তাদের ওপর গ্যাসের দাম বাড়ানোর ভোগান্তিও একেবারে অস্বীকার করা যায় না। বলা বাহুল্য, আবাসিক ও যানবাহনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে সার্বিকভাবে তা প্রভাব ফেলবে বাজারের ওপর। আর বাড়তি সে বোঝাটি টানতে হবে সীমিত আয়ের মানুষজনকে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার ক্রয়ক্ষমতা যে বাড়বে, সে নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? উল্টো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি না বাড়িয়ে দেয়, সে দুশ্চিন্তা জেগেছে অনেকের মনে। সবাই চাইবেন, এ বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেবেন নীতিনির্ধারকরা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী। ভোক্তারা সে খবর রাখেন নিশ্চয়ই। প্রাক্কলিত চাহিদার সঙ্গে বাস্তবতার সমন্বয়ের জন্য বিশেষত রাজস্ব খাতের ব্যবস্থাপনা দক্ষতর করে তোলার লক্ষ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনও অনস্বীকার্য। এমতাবস্থায় আমাদের প্রস্তাব, একবারে হুট করে গ্যাসের দাম অনেকখানি না বাড়িয়ে জনগণের জীবনযাত্রার সঙ্গে সহনীয়ভাবে ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে তোলা হোক। তাতে অর্থনীতি সার্বিকভাবে উপকৃত হবে। ভোক্তারাও উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০