মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ৩০ বছর ধরে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘জিলবাংলা সুগার’। ২৯ বছর ধরে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ধরনের লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ভারী হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষক জানিয়েছেন, সহসাই প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোম্পানির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সহায়তা দরকার বলে জানান নিরীক্ষক।
জানা যায়, উৎপাদন সক্ষমতার পাশাপাশি জিলবাংলা সুগার মিলের উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরীক্ষক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এ শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নিরীক্ষক। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির পক্ষে আগামী কয়েক বছরের মুনাফা করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে সরকারের সহায়তা ছাড়া উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
ছয় কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের জিলবাংলা সুগারের পুঞ্জীভূত লোকসান রয়েছে ৩৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি লোকসান রয়েছে ৬০০ টাকার বেশি। এদিকে প্রতি বছরই লোকসান আরও ভারী হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি টাকা। পরের বছর তা বেড়ে হয় ৪৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৬২ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, জিলবাংলা সুগার ১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পুঁজিবাজারে এসেই লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানি সূত্র জানায়, এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডাররা সর্বশেষ লভ্যাংশ পান ১৯৯০ সালে। ওই বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালে শেয়ারহোল্ডারদের হতাশ করে নো-ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশের দেখা পাননি।
এদিকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থা নাজুক থাকার পরও শেয়ারের দর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্যে বিস্মিত অনেকেই। কারও কারও মতে, আর্থিক অবস্থা দুর্বল। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে। তা না হলে কোনোভাবেই এসব শেয়ারের দর এমনভাবে বাড়তে পারে না। সম্প্রতি মাত্র তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ে ২৫ শতাংশ। এ সময়ে শেয়ারদর ২৮ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়।
এ প্রসঙ্গে রাশেদুল হাসান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যেখানে ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারের দর বছরের পর বছর বাড়ছে না, সেখানে এক বছরের মধ্যে এসব শেয়ারের দর বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ গুণ। কারসাজি ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।’
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা অনেক। এই জটিলতা তৈরি হতে বহুদিন লেগে গেছে। ফলে এই পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতেও সময় লাগবে। শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, কেন দর বাড়ে বা কমে, সেটা আমাদের জানার কথা নয়। কেউ যদি কারসাজি করে সেটা বাইরের বিষয়, এতে আমাদের কিছু করার থাকে না। কেউ কারসাজি করলে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিএসইসির, আমাদের নয়।
প্রসঙ্গত, খাদ্য খাতের এ কোম্পানি দুটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকা সবচেয়ে পুরোনো কোম্পানি।