সাংবাদিকদের আয়কর: নোয়াব সভাপতির বক্তব্য শুনবে আপিল বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংবাদপত্র সাংবাদিক-কর্মচারীদের আয়কর কে দেবে, সেই সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতির বক্তব্য শুনতে চান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আগামী এক মাসের মধ্যে আপিল বিভাগে নিজে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে নোয়াব সভাপতিকে তার বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ৪ আগস্ট।

গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিক পক্ষ দেবেনÑএ-সংক্রান্ত হাইকোর্ট রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলে নোয়াব সভাপতির বক্তব্য চাওয়া হয়।

নোয়াবের প্রতিপক্ষ রিট আবেদনকারী মাহাবুবুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীরণ মল্লিক।

সমীরণ মল্লিক পরে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে নোয়াবের সভাপতি সরাসরি অথবা তার আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল বিভাগে তার বক্তব্য দিতে বলেছেন।

সংবাদপত্রের নবম ওয়েজবোর্ড বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান।

২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ওই রিট মামলার রায়ে সাংবাদিক-কর্মচারীদের আয়কর ও আনুতোষিক সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষকে দিতে বলেন হাইকোর্ট।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের একটি আবেদন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ এর আগে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি নোয়াবের বক্তব্য চেয়ে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার এ আদেশ আসে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়।

ওই বোর্ড ‘নবম সংবাদপত্র ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ চ‚ড়ান্ত করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করে সরকার।

ওই প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা রয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর-সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে।’

একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশবিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’

কিন্তু প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক ও কর্মচারীরা নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন।

নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান।

প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করে। রুলে আয়কর ও গ্র্যাচুইটি-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্যসচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

২০২২ সালের ৬ নভেম্বর সে রুলের চ‚ড়ান্ত শুনানির পর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন।

গত বছরের ২৪ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নবম ওয়েজবোর্ডে আনুতোষিক ও আয়কর সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০