শেয়ার বিজ ডেস্ক: সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরে তাদের আসল চেহারা সামনে নিয়ে আসতে সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বলব, এসব সন্ত্রাসি কর্মকান্ড এবং দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের আসল চরিত্র আন্তর্জাতিকভাবে আপনাদের তুলে ধরা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো আমার মনে হয় বাংলাদেশে এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা আর দেখা যায়নি। এর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।’ সূত্র: বাসস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোন কোন পত্রিকা এটাকে আবার কভার দেয়ারও চেষ্টা করেছে। তাদের ধিক্কার জানাই। সেদিন গায়ের জ্যাকেটে ‘প্রেস’ স্টিকার লাগিয়ে যুবদল কর্মীর সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে তারা ধরা পড়ে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার শাস্তি এদের পেতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্যাতিত ও ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পাশে থাকার বিষয়ও সবাইকে আশ্বস্ত করেন।
অনেক মিডিয়ায় নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য নতুন দশম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান। আগামীতে জেলায় জেলায় সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য প্লট বরাদ্দের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সহসভাপতি মধুসুদন মণ্ডল শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। পরে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, শাবান মাহমুদ এবং ওমর ফারুক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
১৩টি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং একটির সভাপতির অনুপস্থিতে সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তারা হচ্ছেনÑ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম খোকন, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউল কবির খোকন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু তাহের, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনতোষ বসু, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন শেখ মিন্টু, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াাহিদুল ইসলাম, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি ও আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমরা বাধা দেইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। দেখা গেল তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালানো হয়েছে, এটা অমানবিক। সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। এটা কেন করা হলোÑসে প্রশ্নের জাবাব বিএনপিকে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ওপর অত্যাচার হলো, যা এর আগেও আমরা দেখেছি। পুলিশকেও মাটিতে ফেলে পেটানো হয়, অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও মারা হয়। তাদেরকে কোপানো হয় এবং ঢিল মারা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তারা শান্তি সমাবেশ করতে এসে এই ইট পাথর, অস্ত্র কোথায় পেল? তারা যে কোপাল, সেটা (ধারাল অস্ত্র) কোথায় পেল? তার মানে তাদের উদ্দেশটাই আগাগোড়া খুব খারাপ ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাও পোড়াও এটাই এদের চরিত্র। নির্বাচন ঠোকানোর নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস তারা করেছিল। সেখানে নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি নিজেরাও অংশ নেয়নি। হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব ভালো পারে।
সেদিনের নৈরাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের সঙ্গে এর তুলনা করে তিনি পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, রোগিবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া করা ও হামলার কথা উল্লেখ করেন। এতটা অমানবিক আচরণ কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপি আমলে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকর ওপর বর্বর নির্যাতনের কথাও এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এদের কোনো অধিকার নেই। যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের কোনো অধিকার নেই। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। এদেশের মানুষের তারা শত্রæ, এটাই আমি মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন এমনকি মানবাধিকার সংস্থাগুলো যারা সামান্য ঘটনা ঘটলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে তাদের বিষয়টি নিয়ে চুপ করে থাকার এবং কোনো কথা না বলার কঠোর সমালোচনা করেন।
ওয়েজ বোর্ড গঠনে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি লক্ষ্য রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি সাংবাদিকদের তার সরকার ঘোষিত জাতীয় পেনশন স্কিমের চারটি ধাপের যেকোনোটি বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন, যাতে চাকরিঅন্তে বা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নিজের ও পরিবারের কাজে লাগে। যারাই যে কাজ করেন না কেন তাদের একটি অবসরভাতার ব্যবস্থা সরকার এই পেনশন স্কিমে করে দিয়েছে।