সাইবার অপরাধের শিকার ৭২ শতাংশই প্রতিকার পান না

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের শিকার যারা হচ্ছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ ভুক্তভোগী মানুষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগ করেন। আর তাদের অন্তত ৭২ শতাংশই অভিযোগ দায়েরের পরেও আশানুরূপ প্রতিকার বা ফল পান না। এমন তথ্য উঠে এসেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিএএ) ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

গতকাল এক অনলাইন সভায় ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা, ২০২১’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিএএস ফাউন্ডেশন। ২০১৯-২০ সালে সাইবার অপরাধের ১৬৮ ভুক্তভোগী মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

সিএএ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মনিরা নাজমি জাহান এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যারা সাইবার অপরাধের শিকার হন, তাদের মধ্যে মাত্র ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভুক্তভোগী মানুষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। বাকি ৭৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ অভিযোগই দায়ের করেন না। আর যারা অভিযোগ দায়ের করেন তাদের মধ্য থেকে মাত্র ২২ দশমিক ২২ শতাংশ ভুক্তভোগী মানুষ আশানুরূপ প্রতিকার পেয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আশানুরূপ প্রতিকার পাননি ৭২ দশমিক ২২ শতাংশ, বাকি পাঁচ দশমিক ৫৬ শতাংশ মানুষ মন্তব্য করেননি।

এছাড়া অপরাধের শিকার ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে নারীদের হার (৫৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ) পুরুষদের হারের (৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ) তুলনায় বেশি। নারীরা যে ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হন, তা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানিমূলক অপরাধ। অন্যদিকে পুরুষ ভুক্তভোগীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তথ্য চুরি, কার্ড জালিয়াতিÑএ ধরনের অপরাধের শিকার হন। বিভাগভিত্তিক হিসাব করলে ভুক্তভোগী মানুষের বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী।

এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে স্বায়ত্তশাসিত ‘সাইবার স্কোয়াড’ গঠন, সচেতনতামূলক প্রচার করাসহ সাতটি প্রস্তাবনা এই প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা যত বেশি ডিজিটাল হব, তত বেশি ডিজিটাল অপরাধ বাড়বে। ডিজিটাল অপরাধের ধরন এত দ্রুত বদলে যায় যে, আইন পরিবর্তন করতে হবে। ২০১৮ সালে আইন করে ২০২১ সালে এসে দেখছি যে, সেই আইনে এমন কিছুই যুক্ত হয়নি, যা এখন আছে। যেমন ২০১৮ সালের সেই আইনে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সংজ্ঞায়িত করিনি। এখন এই মাধ্যমে কোনো অপরাধ হলে তাদের কাছে কোনো সাহায্য চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আশানুরূপ উত্তর পাই না। আমাদের এখানে যেটা জঙ্গিবাদ, তারা সেটিকে তাদের কমিউনিটি গাইডলাইনের আওতায় বাকস্বাধীনতা বলছে।

সাইবার অপরাধ দমনে দেশের প্রতিটি থানায় একটি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা ইউনিটের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন বলেও জানান মোস্তাফা জব্বার। একই সঙ্গে এসব অপরাধের বিচারকাজের জন্য বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষ যেমন বিচারক ও আইনজীবীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সিএএ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মোস্তাফিজের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের মহাসচিব মুনির হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০