Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 2:14 am

সাইবার অপরাধ রোধে সমন্বিত হস্তক্ষেপ দরকার

দেশে গত এক দশকে ডিজিটাল টেকনোলজি, ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, আইসিটি টুলস, ডিজিটাইজেশনÑএসব শব্দগুচ্ছ জনজীবনের বৃহৎ পরিসরে বিস্ময়করভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গণমানুষের ভাবনা-চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মযোগে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে বিশেষভাবে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহজলভ্যতা সমাজস্থ অনেকের আচরণ কাঠামোতে বয়ে এনেছে অভূতপূর্ব নেতিবাচক পরিবর্তন। তাই বলা যায়, ইন্টারনেট প্রযুক্তি আমাদের জন্য একটি মিশ্র আশীর্বাদ।

অনিষ্টকারী দুষ্টচক্র সাইবার বুলিংয়ে মাধ্যমে শিশু, মেয়ে ও নারীদের হেনস্তা করছে এবং তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পরিসীমা ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে লঙ্ঘন করে তাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত ও দুর্বিষহ করে তুলছে। ইন্টারনেট অপব্যবহারের দ্বারা সৃষ্ট নেতিবাচক পরিণতির সঙ্গে এসব নিরপরাধ শিশু, মেয়ে ও নারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো হচ্ছে। অন্তর্জালভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই বিভিন্ন তারকা ব্যক্তিত্বের নামে ‘ফেক আইডি’ খুলে তাদের নানা উপায়ে হেনস্তা করা হয় এবং জোর করে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়। ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহার করে মুহূর্তের ব্যবধানে অসত্য ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয়। সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর দ্বারা প্রতারণা, অশ্লীলতার বিস্তার ও বিভিন্ন মাত্রায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অহরহ সংঘটিত হয়ে থাকে। এছাড়া অপরাধী চক্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, আইডি হ্যাকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার প্রভৃতি গুরুতর অপতৎপরতার মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে একশ্রেণির দুর্ধর্ষ মাফিয়া ও প্রশিক্ষিত হ্যাকারচক্র সক্রিয়ভাবে জড়িত।

প্রযুক্তিসৃষ্ট কল্যাণ গ্রহণ করে তার সমুদয় সম্ভাব্য নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকা সমাজের সচতেন নাগরিকের দায়িত্ব। জনমত গঠনের মাধ্যমে এসব চিহ্নিত অপরাধীকে সর্বাগ্রে সামাজিকভাবে বয়কট করা প্রয়োজন। এছাড়া দেশে বিদ্যমান ‘পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ২০১২’ ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ২০১৮’-এর অধীনে তদন্ত সাপেক্ষে বর্ণিত অপরাধগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে এসব অপরাধের মাত্রা কমে আসবে। এমন অপরাধপ্রবণতা সমাজে হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি। এর সঙ্গে আরও অনেক বিষয়ের সম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক মূল্যবোধের সংকট, বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয়, সুশাসনের অভাব প্রভৃতি বিষয়ের সমন্বয়ে ধীরে ধীরে সমাজে এমন বৃহত্তর সংকটের সৃষ্টি হয়। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা অব্যাহত রাখা এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশেষ প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদার করা আবশ্যক। ইন্টারনেটকেন্দ্রিক প্রযুক্তিজ্ঞানের কেবল ইতিবাচক দিকটিই আমাদের জন্য মঙ্গলকর ও কাক্সিক্ষত। এর বিপরীত দিকটি সবার জন্য অকল্যাণকর ও সমধিক পরিত্যাজ্য। সেজন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বদা মানসিক পরিপক্বতা, সামাজিক দায়িত্বশীলতা ও সঠিক বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

ওয়ারেছ আলী খান

উপজেলা মোড়, নরসিংদী